শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

আবার রণক্ষেত্র ঢাকা

ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

আবার রণক্ষেত্র ঢাকা

গতকালও সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল। ঢাবির দোয়েল চত্বর থেকে তোলা ছবি -জয়ীতা রায়

ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে গতকাল ছাত্রলীগের সঙ্গে আবারও সংঘর্ষ হয়েছে। গুলিবর্ষণ, লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল বিনিময়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শুরু হয়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে হাই কোর্ট মোড় পর্যন্ত। সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রদলের এক কর্মীকে মাটিতে ফেলে লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক পেটান। ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মী এ সময় হেলমেট পরা ছিলেন। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাই কোর্ট এলাকায় একজন আইনজীবীর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার ফেসবুক লাইভ দেওয়ার সময় এক সাংবাদিকের ওপর হামলা ও তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। এদিকে সংঘর্ষের প্রতিবাদে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আকতার হোসেন। তিনি বলেন, ২৮ মে সারা দেশের জেলা ও মহানগর পর্যায়ে এবং ২৯ মে উপজেলা ও পৌর এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। ২৪ মে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে হাই কোর্ট মোড় থেকে ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল বের করলে এ সংঘর্ষের সূচনা হয়। সংগঠনটির দাবি, ছাত্রদলের অন্তত ২১ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত সাতজনের অবস্থা গুরুতর। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ২৪ মে ক্যাম্পাসে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় ছাত্রদল। কর্মসূচি কেন্দ্র করে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে আসতে পারে, এমন সংবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রবেশমুখে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। মোটরসাইকেলের ‘শোডাউন’ও দেন তারা। দুপুর ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের ভিতর থেকে মিছিল বের করেন ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা। তবে মিছিলটি হাই কোর্ট মোড় পেরিয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে এগোলে সেখানে অবস্থানরত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। দুই পক্ষ পরস্পরের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করে। সোয়া ১২টার দিকে ছাত্রলীগ ধাওয়া দিলে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে প্রেস ক্লাব, সুপ্রিম কোর্ট ও গুলিস্তানের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যান। ধাওয়া দেওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের একটি অংশ লাঠিসোঁটা নিয়ে হাই কোর্টের ভিতর ঢুকে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের খুঁজতে থাকে। এ সময় একটি ভবনের সামনে এক ছাত্রদল কর্মীকে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী মিলে মারধর করতে দেখা যায়। ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। মাটিতে পড়ে থাকা ছাত্রদল কর্মীকে চারপাশ থেকে পেটাতে দেখা যায়। পরে গুরুতর অবস্থায় একটি রিকশায় করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান কয়েকজন। আহত ব্যক্তি ঢাকা মহানগরী উত্তর ছাত্রদলের কর্মী রাজু হাসান রাজন। এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। এদিকে, ঘটনাস্থলে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য থাকলেও তাদের তৎপরতা দেখা যায়নি। ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা চলে যাওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হাই কোর্ট মোড়ে অবস্থান নেন। এদিকে সংঘর্ষের সময় হাই কোর্ট এলাকা থেকে ফেসবুক লাইভ দেওয়ায় দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস নামে একটি অনলাইন পোর্টালের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আবির আহমেদের ওপর হামলা করে তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। তারা তার ঘাড় ও হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘ছাত্রদল তার পুরনো ইতিহাসের মতো ফের ক্যাম্পাস উত্তপ্ত করতে চাইছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস শান্তিপূর্ণ রাখতে রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেছে। তাদের সঙ্গে আমরা ছাত্রলীগ একাত্মতা ঘোষণা করেছি।’ ঘটনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্যসচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘আমরা কোথাও দাঁড়াতে পারছিলাম না। পরে হাই কোর্ট মোড় থেকে মিছিল বের করে দু-তিন মিনিট এগোনোর পর ছাত্রলীগ লাঠিসোঁটা, রড, চাপাতি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এখন পর্যন্ত ২১ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। এর মধ্যে দুজন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক তানভীর আজাদী, ঢাকা মহানগরী উত্তর ছাত্রদলের কর্মী রাজু হাসান রাজন, আবদুল কাইয়ুমসহ সাতজন গুরুতর আহত হয়েছেন।’ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ছাত্রদল আবারও ক্যাম্পাসে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রক্রিয়ায় ছাত্র আমরাও সে প্রক্রিয়ায় ছাত্র। আমাদেরও অধিকার আছে ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমর্থনেই উগ্র ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ছাত্রলীগ হামলার সাহস পাচ্ছে।’ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে প্রশাসনকে অভিভাবকসুলভ আচরণ করার আহ্বান জানান তিনি।

জনআন্দোলনে সরকারি তাণ্ডবের সমাপ্তি হবে - ফখরুল : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়ে ছাত্রদলের শতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। এমনকি হাই কোর্টের ভিতরে ঢুকে খুঁজে খুঁজে বের করে মেরেছে। নারীদেরও তারা রেহাই দেয়নি। শিগগিরই জনআন্দোলনের মাধ্যমে ‘সরকারের এই নারকীয় তাণ্ডব’-এর সমাপ্তি হবে। গতকাল বিকালে আহত ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের দেখতে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে শমরিতা হাসপাতালে ৫০ জনের বেশি ভর্তি রয়েছেন। এ ছাড়া অন্য হাসপাতালেও অনেকে রয়েছেন। প্রত্যেকে আহত হয়েছেন মারাত্মক। এর মধ্যে দুজন আইসিইউতে। বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। এ ঝড় দমন করার জন্য তারা সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। ছাত্রদের ওপর যারা আক্রমণ করেছে অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর