রবিবার, ২৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

তৃণমূল চষে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি

রফিকুল ইসলাম রনি

তৃণমূল চষে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা

আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এর এক বছর পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই দুই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে তৃণমূল চষে বেড়াচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

ডিসেম্বরের আগেই মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করা হবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। করোনাসহ নানা কারণে বিগত দুই বছর পর দলের কাজে মনোযোগী হতে না পারলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য পদ নবায়নের লক্ষ্যে সদস্য সংগ্রহ বই বিতরণ করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলকে আরও সুসংগঠিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তিন বছর পরপর আমাদের সম্মেলন হয়, সেই হিসাবে আগামী ডিসেম্বরে আমাদের নির্ধারিত সময়। সেই সম্মেলনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ জন্য সারা দেশে দলের কোন্দল-কলহ দূর করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় সম্মেলন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেভাগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে তৃণমূলের চালিকাশক্তি যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের হাতে দেওয়ার মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ রয়েছে হাইকমান্ডের। এ জন্য জোরালোভাবে শুরু হয়েছে সাংগঠনিক সফর, জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা ও সম্মেলনের তৎপরতা। তৃণমূল গোছানোর জন্য সুযোগ পেলেই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ছুটছেন সংশ্লিষ্ট এলাকায়। কখনো কখনো তৃণমূল নেতাদের কেন্দ্রে ডেকেও বিভাগীয় টিমগুলো খোঁজখবর নিচ্ছে এবং তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা বিভাগের আওয়ামী লীগের দায়িত্বে ২৩ জন কেন্দ্রীয় নেতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, আবদুল মান্নান খান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা আজম। গত ১২ মে ফরিদপুর এবং ১৯ মে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হয়েছে। এ ছাড়াও নরসিংদীর পলাশ ১৩ মে, ১৬ মে ঢাকার দোহার, ২৫ মে কিশোরগঞ্জ সদর, ২৬ মে হোসেনপুর উপজেলার সম্মেলন করা হয়েছে। এ ছাড়াও আগামী মাসে প্রায় একডজন জেলা-উপজেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘৩০ মে কিশোরগঞ্জের ইটনা, ১ জুন অষ্টগ্রাম, ৮ জুন মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, ১৩ জুন সিঙ্গাইর, ১৫ জুন টাঙ্গাইলের কালিহাতি, ১৮ জুন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সম্মেলন করা হবে। এ ছাড়াও ৪ জুন শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে।’ তিনি বলেন, জাতীয় সম্মেলনের আগে আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করতে চাই।

আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদে সবচেয়ে বেশি সম্মেলন হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। নয়টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে আগে দুটি জেলার সম্মেলন করা হয়েছিল। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ছয়টি জেলা এবং ৭০টি উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন করেছেন। এ বিভাগের টিমে আছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য মেরিনা জামান কবিতা, আক্তার জাহান, নুরুল ইসলাম ঠান্ডু। এ ছাড়াও এ টিমে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।

গত ২১ মে পাবনার আমিনপুর, ২২ মে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা, ২৩ মে বেলকুচি, ২৪ মে বগুড়া সদর উপজেলার সম্মেলন করা হয়েছে। আজ রবিবার পাবনার বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগের ৮৩টি সাংগঠনিক উপজেলার মধ্যে ৭০টির সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। আজ পাবনার বেড়ায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জুলাই মাসের মধ্যেই সব উপজেলার সম্মেলন শেষ করে নির্বাচনী এলাকায় কর্মিসভা করব।’

চট্টগ্রাম বিভাগে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন প্রমুখ। চট্টগ্রাম বিভাগেও সম্মেলন জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গত ২৪ মে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৫ মে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য নবায়ন ও কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলোও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে যুবলীগের সম্মেলন করা হচ্ছে। গত ২৮ মে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা, আজ রবিবার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা এবং ৩০ মে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জেলা-উপজেলা সম্মেলন চলমান প্রক্রিয়া। জাতীয় নির্বাচনের আগে যতটুকু পারা যায় আমরা সম্মেলন শেষ করতে চাই। সেভাবেই কাজ করছি। পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর সব নির্ভর করছে।’ তিনি বলেন, ‘৩১ মে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও ১ জুন চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।’

বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য গোলাম কবির রাব্বানী চিনু ও আনিসুর রহমান।

বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী ১১ জুন ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে। এ ছাড়াও ১৮ জুন পিরোজপুরের নেসারাবাদ এবং ১৯ জুন নাজিরপুর উপজেলার সম্মেলন করা হবে।’

বসে নেই খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও। তারাও কাজ করে যাচ্ছেন। জেলা-উপজেলা সম্মেলন জোরালোভাবে করে চলেছেন তারা।

 

 

 

সর্বশেষ খবর