বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল এলাকায় একটি নৈশবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এক নারী ও এক শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোর ৫টার দিকে ওই মহাসড়কের বামরাইল ও শানুহার এলাকার মাঝামাঝি এলাকায় এ দুর্ঘটনায় আহত ২০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের সুচিকিৎসাসহ সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। চালক ঘুমিয়ে পড়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তিনি। এদিকে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী উজিরপুরের বিলাস চন্দ্র শীল, অনিক শীল ও মো. লিটন জানান, বরগুনার পাথরঘাটাগামী যমুনা লাইন নামের নৈশবাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। ভোর ৫টার দিকে ওই এলাকা অতিক্রমকালে ফাঁকা মহাসড়কে বাসটি হঠাৎ বাঁক নেওয়ার চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের একটি মেহগনি গাছের সফঙ্গ প্রচ- জোরে আঘাত হানে। এতে বাসটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার আকস্মিকতায় কয়েকজন যাত্রী বাস থেকে ছিটকে পড়েন। অন্য যাত্রীরা বাসের মধ্যে আটকে পড়েন। এ অবস্থায় বাইরে ছিটকে পড়া এক যাত্রী বিলাস শীল জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে ঘণ্টাখানেক পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা সেখানে হাজির হন। পরে তারা গ্যাস কাটার দিয়ে বাসের বডি কেটে নয়জনের লাশ উদ্ধার করেন। এ ছাড়া আহত অবস্থায় ২১ জনকে উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং শেরেবাংলা মেডিকেলে প্রেরণ করেন। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়। আহত যাত্রী মো. সেলিম জানান, বাসটি এলোমেলোভাবে চালাচ্ছিলেন চালক। ফাঁকা মহাসড়কে কোনো কারণ ছাড়াই বাসটি মহাসড়কের পাশে গাছের সঙ্গে মেরে দেন তিনি। দুর্ঘটনার আগে চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বলে সন্দেহ তাদের। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন ঝালকাঠি সদরের নেওরি এলাকার মো. আলী আকবর খান (৫০) ও তার নাতি আরাফাত হোসেন (৯), পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর ভৈরবীর নজরুল ইসলাম আকন (৩৫), একই এলাকার তাজনেয়ারা বেগম (২৩), বরগুনার বেতাগীর মো. হালিম বেপারী (৩১), ফরিদপুরের সুতারকান্দার মো. সেন্টু মোল্লা (৫০), বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার সুন্দরকাঠির রমজান হাওলাদার (৩৮) এবং একই জেলার উজিরপুরের মাধব শীল (৩১)। নিহত অপর দুজনের পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে কিছু বলতে পারেননি তিনি। চালককে আটক করা গেলে পুরো ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে বলে তিনি জানান। বাসটি আটকসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে দুপুরে শেরেবাংলা মেডিকেল পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান ও জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার। তারা তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।দুর্ঘটনার পর বাসচালক বাকেরগঞ্জের মো. আরিফ ওরফে রুবেল আত্মগোপন করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে যমুনা লাইনের পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার কাউন্টার ইনচার্জ ইমরান হোসেন শাওন বলেন, তারা বিভিন্নভাবে নিশ্চিত হয়েছেন চালক ঘুমের ঘোরে থাকায় বাসটি দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে।