প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, উচ্চবিত্তের মানুষের কর ফাঁকি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে নিচের তলার (অপেক্ষাকৃত কম উপার্জনের) মানুষকে কাগজে-কলমে করের আওতায় রাখা হাস্যকর। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এত বাড়লেও করমুক্ত সর্বনিম্ন আয় বার্ষিক ৩ লাখ টাকাতেই অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শুক্রবার মধ্যরাতে দেওয়া পোস্টে এ মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি লিখেছেন- ‘আমার ড্রাইভার, যে বাচ্চা বয়স থেকেই আমার বাসায় থেকে পড়ালেখা করেছে, সে এখন স্ত্রী এবং একটি নবজাত সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় সংসার চালাচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে দেখে গতকালই তার সংসার খরচের হিসাব নিলাম। দেখলাম যে, বাসা ভাড়া, স্ত্রী ও বাচ্চার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও যাতায়াত খরচ বাদ দিলে তার বেতন দিয়ে ন্যূনতম খাবার খরচ মেটানো প্রায় অসম্ভব। সেই হিসাব অনুযায়ী তাৎক্ষণিক তার বেতন বাড়িয়ে দিলাম। মুশকিল হলো, এখন যে সে আয় করের আওতায় এসে গেছে, তা তার মাথায় ঢুকছে না। আমার আয়করের রিটার্ন উকিলের অফিসে পৌঁছে দেওয়ার বাইরে বেচারার আয়কর সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক ফেসবুক পোস্টে আরও লিখেছেন- ‘মজার ব্যাপার হলো, বাজেট প্রস্তাবের আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, বেতনভোগী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতনের অতিরিক্ত যাতায়াত, চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি বাবদ মোট ভাতার করমুক্ত পরিমাণ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দশ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভাবছি, আমার ড্রাইভারকে বলব একজন আয়কর উকিলের পরামর্শ নিতে- কী করে আমার কাছ থেকে একটা নিয়োগপত্র নিতে পারে যাতে ওইসব করমুক্ত ভাতা দেখিয়ে সে আয়করের আওতার বাইরে থাকতে পারে।’ দেশের এই প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ তার পোস্টে আরও বলেন, ‘লক্ষ লক্ষ উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মানুষের কর ফাঁকি রোধের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে সমাজের এই নিচের তলার মানুষদের কাগজে-কলমে করের আওতায় রাখা কিছুটা হাস্যকরও বটে। আয়করের হার নির্ধারণ করতে প্রথম কত টাকা পর্যন্ত করের হার শূন্য ধরা হবে, আর সর্বনিম্ন কত আয় হলে আয়করের আওতায় আসবে এ দুটি বিষয়কে পৃথক করা দরকার।’