সদ্যসমাপ্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের হিসাবনিকাশে নেমেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলই। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন দেখছে এ ভোটের প্রভাব কীভাবে পড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে মাত্র ৩৪৩ ভোটে পরাজিত হয়েছেন বিএনপি নেতা স্বতন্ত্রভাবে ভোটে অংশগ্রহণকারী মনিরুল হক সাক্কু। গ্রুপিংয়ের কারণে জেলা বিএনপি নেতা হাজি ইয়াসিনের সমর্থক নিজাম উদ্দিন কায়সার ৩০ হাজারের মতো ভোট পেয়ে চমকে দিয়েছেন সবাইকে। হাজি ইয়াসিনের সঙ্গে মনিরুল হক সাক্কুর গ্রুপিং দীর্ঘদিনের। ব্যক্তিগতভাবে কায়সার হচ্ছেন হাজি ইয়াসিনের শ্যালক।
এদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপি কুমিল্লার ভোট নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তবে ফলাফল প্রকাশের পর বক্তব্য-বিবৃতি দিতে শুরু করেছেন বিএনপি নেতারা। এমনকি আফসোসও করছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, বিএনপির দুই প্রার্থীর ভোট যোগ হলে বিশাল ব্যবধানে জয় আসত ঘরে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য শুরু থেকে চ্যালেঞ্জ ছিল। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে রিফাতের পর সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলেন অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু, নূর-উর রহমান তানিম ও আফজল খানের ছেলে মাসুদ পারভেজ ইমরান। কুমিল্লায় আলোচনায় ছিল রিফাত মনোনয়ন না পেলে মিঠু বা তানিম কেন্দ্র থেকে নৌকা নিয়ে আসবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা সদরের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের শক্ত অবস্থানের কারণে মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। আশির দশকের আলোচিত এই সাবেক ছাত্রনেতাকে নিয়ে মাঠে-ময়দানে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন আ ক ম বাহার। কুমিল্লা শহরের একক সাংগঠনিক নেতা হিসেবে পরিচিত বাহারকে নিরাশ করেননি ভোটাররা। প্রথম দিকে কিছুটা পিছিয়ে থাকা রিফাত এমপি বাহারের ইমেজের ওপর ভর করেই জয়লাভ করেছেন। অন্যদিকে বাহারের প্রতিপক্ষ গ্রুপের কেন্দ্রে নৌকা ভালো না করলেও শেষ হাসি রিফাতের মুখেই ফুটেছে। রিফাতের সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগরী আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু বলেন, ‘এ বিজয় নৌকার। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার। কেন্দ্রের নির্দেশে আমরা কাজ করেছি।’ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, বাহারের পরিশ্রমে জয় ঘরে উঠেছে।
অন্যদিকে শুরুতেই কেন্দ্রীয় বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কুমিল্লা সিটি ভোটে তারা যাবে না। এ কারণে দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সাক্কুর ওপর বিভিন্ন কারণে কেন্দ্র খুশিও ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সদরের এমপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রেখেই তিনি সিটি করপোরেশনে কাজ করতেন। নগরীর সংকট নিরসনে যেভাবে কাজ করা উচিত ছিল তা তিনি করেননি। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লাবাসী পরিবর্তনের পক্ষেও ছিলেন। তবে সাক্কুর মূল সর্বনাশ হয়েছে নিজাম উদ্দিন কায়সারের ঘোড়া মার্কায়। অনেকভাবে চেষ্টা করেছিলেন কায়সারকে বসিয়ে দিতে। এমনকি বিভিন্নভাবে অনুরোধও হাজি ইয়াসিনের কাছে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তারেক রহমানের কাছ থেকে কোনো নির্দেশ না আসায় হাজি ইয়াসিন তাঁর দলবল নিয়ে নিজাম উদ্দিন কায়সারকেই সমর্থন দিয়েছিলেন। যে কারণে ঘোড়া মার্কা ২৯ হাজার ৯৯ ভোট পায়; যা ফলাফলকে পাল্টে দিয়েছে কুমিল্লা সিটির। কুমিল্লার নির্বাচনে ইসির ভূমিকাকে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নেয় সেদিকেও অনেকের দৃষ্টি রয়েছে। দিনভর শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত ভোটের ফলাফল ঘোষণার সময় রাতে কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। সে উত্তেজনায় অনেকেই ইসির ওপর দোষারোপ করছেন। এ বিষয়ে ইসি কী বক্তব্য দেবে সেদিকেও রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখ। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপি হিসাবনিকাশ করে কুমিল্লা নিয়ে শিগগিরই মুখ খুলবে বলে জানা গেছে।