পদ্মা সেতু দক্ষিণ জনপদের কৃষি ও মৎস্য ভিত্তিক জেলা বরগুনার ১৫ লাখ মানুষের জন্য এখন স্বপ্ন পূরণের নাম। উপকূলীয় বরগুনার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু। উন্নত হবে পর্যটন শিল্প, যাতায়াত, চিকিৎসাসহ নানা ক্ষেত্র। রাজধানী ঢাকাসহ দেশ-বিদেশ থেকে সবুজ, নদী, সাগর ঘেরা বরগুনার প্রাকৃতিক সান্নিধ্য নিতে আসবে হাজারো পর্যটক। বিকশিত হবে বরগুনার পর্যটন শিল্প। গড়ে উঠবে কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতো হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ। বরগুনার উৎপাদিত তরমুজ, মুগ, আমড়া, সূর্যমুখী বীজ সহজেই ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গে চলে যাবে। স্থানীয় কৃষক অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দীর্ঘ ফেরি পারাপারের দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাবে কৃষক, নষ্ট হবে না পণ্যসামগ্রী। বরগুনার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে রাজধানীর সঙ্গে বরগুনার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে দেশের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের সুযোগ বিস্তৃত হয়েছে। জেলার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। বরগুনার জনগণ মনে করছে, পদ্মা সেতু তাদের জন্য আল্লাহর বড় রহমত। এখন তারা স¦প্ন দেখছে বরগুনায় কৃষি ও মৎস্য ভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলার। কৃষিবিদ ড. খলিলুর রহমান মনে করেন, পদ্মা সেতু বরগুনাবাসীর দীর্ঘদিনের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। কৃষি, মৎস্য, ডেইরি, পোলট্রি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। তিনি বলেন, ‘এখন প্রয়োজন পরিকল্পিত ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে কৃষকের আগ্রহ তৈরি করা। পদ্মা সেতুর কারণে সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি সরাসরি কৃষি ও মৎস্য পণ্য কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে।’ বরগুনায় সমুদ্র ও নদী থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ ইলিশ আহরণ করা হয় তার সবটাই বরফজাত করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। এখন সমুদ্র এবং বিষখালী, বুড়ীশ্বর আর বলেশ্বর নদের তাজা ইলিশ পৌঁছে যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বরগুনার সুরঞ্জনা ইকো ট্যুরিজম রিসোর্ট সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফরিন নিতু বলেন, ‘পদ্মা সেতুর প্রভাবে আমাদের ইকো ট্যুরিজম দ্রুত প্রসারিত হবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।’ বরগুনা বিসিক শিল্পনগরীর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির সভাপতি আবদুর রশীদ খান বলেন, ‘এ বিসিক শিল্পনগরীতে চলতি অর্থবছরেই ছোট ছোট শিল্পকারখানায় উৎপাদন শুরু হবে। এখানে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য পদ্মা সেতু দিয়ে সহজেই বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাবে।’