প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজের ভাগ্য বদলের জন্য ক্ষমতায় আসিনি, জনগণের ভাগ্য বদল করাই একমাত্র লক্ষ্য।
গতকাল সকালে ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২২’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ নীতিমালা-২০১২ প্রণয়নের মাধ্যমে ২০১৩ সাল থেকে মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রতিযোগিতাটির নামকরণ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা’। দেশে সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিনটি গ্রুপে (ষষ্ঠ-অষ্টম, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ) বিভক্ত করে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠানে ভাষা-সাহিত্য, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার, বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ (শুধুমাত্র বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য) সহ মোট পাঁচটি বিষয়ে তিনটি গ্রুপে দেশের ১৫ জন মেধাবীকে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বছর এপ্রিল-মে মাসে প্রতিষ্ঠান, উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা মোট ১৩২ জন থেকে বিচারকদের মূল্যায়নে ১৫ জনকে এ বছরের সেরা মেধাবী নির্বাচন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ২ লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা মাথায় রাখতে হবে যে, আমরা বিজয়ী জাতি এবং বিশ্বে সব সময় মাথা উঁচু করে চলব, সম্মানের সঙ্গে চলব। আর এই দেশ আমাদের, এ দেশকে আমরা গড়ে তুলব উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে। তিনি বলেন, আমাদের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা, যারা আজকে এই যে মেধা অন্বেষণ আমরা করছি, তাদের নব নব সৃষ্টি করার যে চিন্তা-চেতনা, এই চেতনাই আমাদের আগামী দিনের বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করেছিল যারা, তাদের মিথ্যাচারকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তৈরি হলো আজকের পদ্মা সেতু। এ সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের একমাত্র জবাব নিজেদের অর্থে আগামীর বাংলাদেশের জন্য আজকের পদ্মা সেতু। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন ছিল সৃজনশীল পদ্ধতি। বিগত সরকারগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে বই-খাতার বদলে অস্ত্র আর লাঠি তুলে দিয়ে অস্ত্রধারী করেছিল। বর্তমান সরকার ফিরিয়ে দিয়েছে শিক্ষার পরিবেশ। নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সোনার ছেলেমেয়েরা তোমরা তৈরি হও আগামীতে দেশকে নেতৃত্ব দিতে। সর্বক্ষেত্রেই তোমরা তোমাদের মেধার বিকাশ ঘটাবে এবং দেশকে এগিয়ে নেবে, যেন বাংলাদেশ আর পিছিয়ে না থাকে, বাংলাদেশ এগিয়ে যায় এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও উন্নত হয়। তিনি বলেন, আমরা বিজ্ঞান শিক্ষা, তার ওপর গবেষণা, স্বাস্থ্যের ওপর গবেষণা, আমাদের বিভিন্ন প্রাণী সম্পদের ওপর গবেষণা, কৃষির ওপর গবেষণা, বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার ওপর আমি সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আসলে গবেষণাই তো পারে আমাদেরকে পথ দেখাতে।শেখ হাসিনা বলেন, আজকের শিশুরা ভবিষ্যতে এদেশের কর্ণধার হবে। তারাই তো আমার মতো প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, হবে শিক্ষক, বড় বড় কর্মকর্তা এবং প্রশাসন, সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে দেশের উন্নতি করবে। কাজেই, সেভাবে তারা তৈরি হোক। তিনি বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তোমাদের চলতে হবে এবং প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যে বিকাশ ঘটছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। পুরস্কার বিজয়ী সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের যে সুপ্ত মেধা সেটাই আমাদের ভবিষ্যৎ।
জাতির পিতার বক্তব্য- ‘সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই’-এর উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থাৎ সেবার মানসিকতাটা সবার মাঝে থাকতে হবে। আজকে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে যেখানে যে আছেন, সবাই মনে রাখবেন আমাদের দেশের যে সম্পদ তার সবকিছুই জনগণের সম্পদ। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলেই তাদের এই অর্জন। কাজেই, তাদেরও এর ওপর সমান অধিকার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০০’ প্রণয়ন করলেও পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তা বাতিল করে দেয় এবং ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের পর তাঁর সরকার পুনরায় সেই নীতি প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কেননা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির না করে কাজ করলে কখনো সাফল্য পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, আমরা ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি বই উৎসব পালন করি। মহামারিকালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সবাইকে স্বাস্থ্য-সুরক্ষা মেনে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন বক্তৃতা করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে রাজশাহী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মিফতাহুল জান্নাত এবং রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র জুলকারনাইন নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে এই প্রতিযোগিতার ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।