সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বাংলাদেশি সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে গ্রিসে বিধ্বস্ত বিমান

ইউক্রেনের ৮ ক্রু নিহত - চালানে কোনো অস্ত্র ছিল না এবং এটি বীমার আওতাভুক্ত -আইএসপিআর

প্রতিদিন ডেস্ক

বাংলাদেশি সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে গ্রিসে বিধ্বস্ত বিমান

গ্রিসে বিধ্বস্তের পর ইউক্রেনের কার্গো বিমানের ধ্বংসাবশেষ

সার্বিয়া থেকে কেনা মর্টার শেল নিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে গ্রিসে বিধ্বস্ত হয়েছে ইউক্রেনের একটি উড়োজাহাজ। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, শনিবার সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয় উড়োজাহাজটি। ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে পাইলট উড়োজাহাজটি গ্রিসের কাভালা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ড্রোন দিয়ে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলের চারপাশে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। উড়োজাহাজটিতে আটজন ক্রু ছিলেন। তারা সবাই ইউক্রেনের নাগরিক বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। দুর্ঘটনায় ক্রুদের সবাই নিহত হয়েছেন।

এদিকে গ্রিসের উত্তরাঞ্চলীয় শহর কাভালার কাছে যে ইউক্রেনীয় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে, তাতে করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবির জন্য সার্বিয়া থেকে কেনা মর্টার শেল আসছিল বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর-আইএসপিআর। গতকাল আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিজিডিপি (ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ডিফেন্স পারচেজ) ক্রয় চুক্তির আওতায় কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার্বিয়া থেকে আনা হচ্ছিল ওই সামরিক রসদ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর জন্য ক্রয়কৃত প্রশিক্ষণ মর্টার শেল বহনকারী বিমানটি গ্রিসে বিধ্বস্ত হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই চালানে কোনো অস্ত্র ছিল না এবং চালানটি বীমার আওতাভুক্ত।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, আন্তনভ-১২ পরিবহন উড়োজাহাজটি সোমবার দুপুর ১২টায় ঢাকায় অবতরণ করার কথা ছিল। ওই উড়োজাহাজে সার্বিয়ার তৈরি সাড়ে ১১ মেট্রিক টন সামরিক রসদ ছিল জানিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোসা স্টেফানোভিচ এর আগে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়’ এসব পণ্যের ক্রেতা। গ্রিস কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজটির বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে না পারলেও ঘটনা তদন্তে দুর্যোগ মোকাবিলার বিশেষ ইউনিট এবং সামরিক বিশেষজ্ঞদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছে। সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোসা স্টেফানোভিচ বলেন, মর্টার শেল ও ট্রেইনিং শেল ছিল ওই উড়োজাহাজে। রসদ নিয়ে সার্বিয়ার তৃতীয় বড় শহর নিস থেকে উড্ডয়ন করেছিল বিমানটি। তিনি বলেন, বিমানে সাড়ে ১১ টন রসদ বহন করা হচ্ছিল, যা আমাদের প্রতিরক্ষা কারখানায় উৎপাদিত। এগুলোর ক্রেতা ছিল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই উড়োজাহাজের রসদগুলো ছিল সার্বিয়ার কোম্পানি ভালিরের তৈরি। সার্বিয়ায় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন করে সেগুলো বিদেশে বিক্রি করার অনুমোদন রয়েছে বাণিজ্যিক ওই কোম্পানির। সার্বিয়ার সম্প্রচারমাধ্যম ইআরটি জানিয়েছে, ইঞ্জিন সমস্যার কারণে পাইলট গ্রিসে জরুরি অবতরণের অনুমতি চাওয়ার পরপরই উড়োজাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভুপাতিত হওয়ার আগেই উড়োজাহাজটি থেকে ধোঁয়ার কু লী ছড়াতে থাকে, যেখান থেকে পরে বিস্ফোরণ ঘটে। বিমানটি সার্বিয়া থেকে জর্ডানের দিকে যাচ্ছিল বলে এর আগে খবর দিয়েছিল বিবিসি। তবে জর্ডানের সিভিল এভিয়েশন দফতর পরে জানায়, জর্ডানের কুইন আলিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে জ্বালানি নেওয়ার জন্য নামার কথা ছিল বিমানটির। তবে জর্ডান এর শেষ গন্তব্য ছিল না। উড়োজাহাজটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে, তার আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা শনিবার রাতে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখতে এবং দুর্ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলতে বলা হয়। রবিবার সকালে একজন ফায়ার ব্রিগেড কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণস্থলের উত্তাপে ফায়ার ফাইটারদের ঠোট-মুখ জ্বলে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। ঘটনাস্থল থেকে সাদা ধোঁয়া উড়ছিল।

সর্বশেষ খবর