সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

তলোয়ার নিয়ে এলে রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে : সিইসি

প্রথম দিনের সংলাপে দলগুলোর ২১ প্রস্তাব, যায়নি এক দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

তলোয়ার নিয়ে এলে রাইফেল দিয়ে  প্রতিরোধ করতে হবে : সিইসি

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গতকাল থেকে নির্বাচনী সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি); চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। প্রথম দিনের সংলাপে আলাদা আলাদা সময়ে চারটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বিএনপি জোটের শরিক দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) সংলাপে যায়নি। সংলাপে অংশ নিয়েছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ কংগ্রেস। সংলাপে দলগুলো ২১টি প্রস্তাব তুলে ধরেছে। এরমধ্যে নির্বাচনের সময় সিইসির ‘সুপার প্রাইম মিনিস্টার’-এর ভূমিকায় থাকা; জনপ্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসির হাতে রাখা ও ইভিএমে পেপার ট্রেইল যুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। 

অন্যদিকে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কী করব? গতকাল নির্বাচন ভবনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপে সিইসি এ পরামর্শ দেন। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে ইসি সহায়তা করবে। পুলিশ ও সরকারের ওপর ইসির ‘কমান্ড’ থাকবে। এ ছাড়া সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে বর্তমান সিইসির সরে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে অনুরোধের আগেই পদ ছাড়বেন বলে জানিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। সিইসি বলেন, একটি মাত্র দল ৩০০টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে সাংবিধানিকভাবে কোনো বাধা নেই। তবে ইতিহাস বলে সেক্ষেত্রে অচিরেই গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হবে। স্বৈরতন্ত্র মাথা জাগিয়ে তুলবে। গণতন্ত্রের আরাধ্য পুনরুদ্ধার হয়ে পড়বে দুরূহ।

এনডিএমের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, আমরা সহিংসতা বন্ধ করতে পারব না। আপনাদেরও (রাজনৈতিক দলের) দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ খেলোয়াড় কিন্তু আপনারা। আপনারা মাঠে খেলবেন, আমরা রেফারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা কিন্তু কম না, ক্ষমতা প্রয়োগ করব।

সিইসির বক্তব্যের পাল্টায় এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, শটগান নিয়ে দাঁড়ানোর বিষয়টি আইন সমর্থন করে না। তবে এর জবাবে সিইসি আর কোনো মন্তব্য করেননি।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের দায় বর্তমান কমিশনের ওপর না চাপানোর আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, তারা তাদের নির্বাচনের দায় বহন করবেন। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। সরকার যদি সহায়তা না করে, তাহলে নির্বাচনের পরিণতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে। অবশ্য বিকালে কংগ্রেসের সঙ্গে সংলাপে এসে সিইসি তার বক্তব্যের সুর কিছুটা পাল্টান। তিনি বলেন, অনেকেই বলছেন, আসেন যুদ্ধের মাঠে আসেন। সেখানে আসলে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলে হবে না। তলোয়ার, রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করলে হবে না। জনসমর্থন নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে।

সকালে সংলাপের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সব দল বিশেষত প্রধানতম দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া খুবই  প্রয়োজন। কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইসি বাধ্য করতে পারবে না। তবে এ জন্য ইসির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও  প্রতিযোগিতা না থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন হয় না। পক্ষ-প্রতিপক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়ম, কারচুপি, দুর্নীতি, অর্থশক্তির বৈভব ও পেশিশক্তির  প্রয়োগ ও প্রভাব বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।

রাজনৈতিক দলের সংলাপে দ্বাদশ সংসদ নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে সিইসি বলেন, আমরা নির্বাচনের সময় কঠোর হব। সংবিধান ও আইনে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা সর্বোতভাবে পালন করব। আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। চেষ্টা করতে হবে সহিংসতার রাজনীতি নয়, সহিংতার নির্বাচন নয়; সম্প্রীতিমূলক ও আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচন করা। এটা সম্ভব।

সিইসি জানান, ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ না থাকলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি কমিশন। দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আরও আলোচনা হবে। দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বারবার রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর গুরুত্ব দেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, অরাজনৈতিক সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা সংগঠিত হয়ে এগিয়ে আসতে পারেন। তাদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান প্রয়োগ করে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সংলাপে আহ্বান করে আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক মতৈক্য সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারেন। সংলাপে অংশ নিয়ে এনডিএম ১২টি প্রস্তাব তুলে ধরে। এর মধ্যে আছে- নির্বাচনের সময় সিইসি ‘সুপার প্রাইম মিনিস্টার’-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। জনপ্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসির হাতে। দলটি ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়ার পদ্ধতি বাতিল করা, ইভিএমে পেপার ট্রেইল যুক্ত করা, ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন, তফসিলের পর রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার বন্ধ করা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।

বিএনএফের পক্ষ থেকে তেমন সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব ছিল না। তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার জানিয়ে বলেছে, দলটি ইসিকে সর্বাত্মক সহায়তা দিতে প্রস্তুত। অন্যদিকে জাতীয় বাজেটে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখাসহ নয় দফা প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ কংগ্রেস। ইসির কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা, ইভিএমে পেপার ট্রেইল যুক্ত করা, নির্বাচনের তফসিলের পর স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বদলির ক্ষমতা ইসির হাতে আনারও প্রস্তাব করেছে দলটি। আজ বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, খেলাফত মজলিশ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সংলাপ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর