সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

পানির দাম উচ্চবিত্তের জন্য বাড়ছে, কমছে নিম্নবিত্তের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে বসবাসরত উচ্চবিত্তদের পানির দাম ধরা হয়েছে হাজার লিটারপ্রতি ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা, আর নিম্নবিত্তদেরর জন্য ১২ টাকা ৫০ পয়সা। আর পানির দামের ভিত্তি ধরা হয়েছে ২৫ টাকা। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য হাজার লিটারপ্রতি ৫০ টাকা ধরা হয়েছে। রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা ওয়াসার এলাকাভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণ টেকনিক্যাল স্টাডির (কারিগরি গবেষণা) ফলাফল অনুষ্ঠানে এমন তথ্য প্রকাশ করেন ওয়াটার এইডের কারিগরি  উপদেষ্টা তাহমিদুল ইসলাম। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যান ড. প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান।

কারিগরি উপদেষ্টার তথ্য অনুযায়ী, উচ্চবিত্তের আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির জন্য দাম ধরা হয়েছে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি হাজার লিটারে উচ্চবিত্তদের জন্য দাম বাড়ছে ২২ টাকা ৩২ পয়সা। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের পানির দাম ধরা হয়েছে ৩১ টাকা ২৫ পয়সা। এই ক্যাটাগরির গ্রাহক সংখ্যা ১ দশমিক ৩ শতাংশ। রাজধানীর মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য উৎপাদন মূল্যে ধরা হয়েছে, যা হাজার লিটারপ্রতি ২৫ টাকা। যা আগের দামের চাইতে ৯ টাকা ৮২ পয়সা বেশি। আর নগরে ওয়াসার মধ্যবিত্ত গ্রাহক ৪ শতাংশ। নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য দাম ধরা ৩ টাকা ৫৭ পয়সা। গবেষণার ফলাফলে দাম ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা। আর ঢাকা ওয়াসার নিম্নমধ্যবিত্ত গ্রাহকই সর্বোচ্চ। যা ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ। নিম্ন আয়ের মানুষ একই পরিমাণ পানির মূল্য ধরা ১২ টাকা ৫০ পয়সা।

ওয়াসার সাড়ে ১১ শতাংশ বাণিজ্যিক গ্রাহকরা বর্তমানে প্রতি হাজার লিটার পানির জন্য ৪২ টাকা পরিশোধ করছেন। গবেষণার ফলাফলে  দেখানো হয়েছে হাজার লিটার প্রতি ৫০ টাকা। এর বাইরে উৎপাদন মূল্যের সমান, অর্থাৎ ২৫ টাকা হারে ধরা হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

ঢাকায় কত ধরনের গ্রাহক রয়েছে, বিশ্বে কোন কোন পদ্ধতি চালু আছে তা নিরীক্ষা করে পানির দাম নির্ধারণের ঢাকা ওয়াসার কারিগরি টিম কাজ করবে। এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণে ঢাকাকে ১০টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একেক জোনে একেক ধরনের দাম হতে পারে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নতুন মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে ওয়াসার পানি উৎপাদন মূল্য ও বিক্রি মূল্যের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা সমান করা যাবে। অর্থাৎ এ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে না।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ঢাকা ওয়াসার এক হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ৪২ টাকা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, পানির দাম নির্ধারণের ঢাকা ওয়াসার বোর্ড রয়েছে। তারা বসে এই গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে পানির দাম পর্যালোচনা করবে এবং তারাই ঠিক করবে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহের চেয়ে খরচ বেশি। আর এই খরচ মেটাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। যদি পানির দাম ১০ টাকা বাড়ে, তাহলে আমাদের ৫০ লাখ টাকা ভর্তুকি কমে যাবে। এটা সরকারের ওপর চাপ কমবে। মন্ত্রী বলেন, সরকার ভর্তুকি কাকে দেবে? ঢাকা শহরে যারা বসবাস করে, তারা নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে আছে। আর যারা গ্রামে বসবাস করে তারা নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের কষ্টে অর্জিত টাকা নিয়ে সরকার কেন উচ্চবিত্তদের ভর্তুকি দেবে। এ জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গুলশান, বনানীতে যারা বসবাস করে তাদের জন্য আলাদা পানির দাম নির্ধারণ করতে হবে। আর যারা যাত্রাবাড়ী এলাকায় বসবাস করে তাদের জন্য আলাদা পানির দাম নির্ধারণ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর