জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, আমরা কোনোভাবে কষ্ট করে নভেম্বর পর্যন্ত যেতে পারলে বিদ্যুতের চাপ কমে আসবে। কারণ তখন শীতকাল শুরু হয়ে যাবে।
ম তামিম বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে এবং জুনে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা। আবার পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটই তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু সঞ্চালন লাইনের জন্য একটি ইউনিট চালানো যাচ্ছে না। একই সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে রামপালের বিদ্যুৎ ঢাকার দিকে আনা যাবে। এ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন পায়রা থেকে ঢাকার দিকে আনার কথা। এ সঞ্চালন লাইনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা অত্যন্ত জরুরি। এটা করলে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট এবং পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব। সেক্ষেত্রে আগামী বছরের মার্চ থেকে আমরা বাড়তি বিদ্যুৎ পাব। এটি পেলে গ্যাস ও তেলের ওপর চাপ কমবে। তিনি বলেন, লক্ষ্য রাখতে হবে এ প্রকল্পগুলো যেন থমকে না যায়। বিশেষ করে রামপালে কয়লা সরবরাহের ব্যাপারটা খুবই স্পর্শকাতর। এটি কিন্তু এখনো পরীক্ষিত কোনো পদ্ধতি না। এ জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে এর সমাধান করা এবং এ জন্য যেসব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি তা নিতে হবে। তিনি বলেন, এ কাজগুলো করে যেন আগামী ছয় মাস আমরা টিকে থাকতে পারি। এ জন্য বিদ্যুৎ-জ্বালানি ব্যবহারে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। লোডশেডিং করতে হবে। ম তামিম বলেন, লোডশেডিং করার অর্থ এই না যে, সরকার জোর করে আমাদের বিদ্যুৎ দিচ্ছে না। গ্রাহকদেরও এখানে দায়িত্ব পালনের ব্যাপার আছে। সরকার আমাদের ২৪ বা ২৫ ডিগ্রিতে এসি সেট করতে বলেছে। এটি সচেতনভাবে যদি সবাই মেনে চলে তাহলে আমাদের কিছু লোড কমবে। এতে করে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়নে সবাই যদি সহযোগিতা করে তাহলে পিক আওয়ারে আমাদের যে চাহিদা সে সময়ের চাহিদা আমরা কমিয়ে আনতে পারব। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও চাপ কমে আসবে। এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, বাস্তবিক অর্থে বিদ্যুৎ নিয়ে চলমান সংকট কতটা বাড়তে পারে তা অনুমান করা মুশকিল। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিস্থিতি যে কোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। সেখানে যে কোনো কিছু ঘটতে পারে। নর্ড ওয়ানের রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলে রাশিয়া নর্ড ওয়ান যে গ্যাস পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করে সেটা বন্ধ করে রেখেছে। এটা যদিও রাশিয়ার রুটিন রক্ষণাবেক্ষণের অংশ ছিল। কিন্তু এ পাইপলাইন রাশিয়া সময়মতো চালু করবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এটা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি বছর ১৫ দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখে দেশটি। কিন্তু এবার পাইপলাইনটি আদৌ চালু করবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। যে কোনো সময় পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখছি না। এখানে ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার প্রক্সি যুদ্ধ হচ্ছে। এ যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কে হার মানে তা বলা যাচ্ছে না। এ যুদ্ধের কারণে ইউরোপ জ্বালানি মূল্য নিয়ে প্রচ চাপের মুখে আছে। এরই মধ্যে রাশিয়াকেও এ যুদ্ধাবস্থার জন্য ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। এ যুদ্ধে কে প্রথম ছাড় দেবে তা দেখার বিষয়। বিষয়টি পুরোপুরি অনিশ্চিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ যেসব দেশ জ্বালানি আমদানি করছে তাদের জন্য অর্থ এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধনী দেশগুলো উচ্চমূল্য দিয়ে জ্বালানি কিনবে। আর উন্নয়নশীল ও গরিব দেশগুলো অর্থের জন্য চাইলেও বেশি দামে জ্বালানি কিনতে পারবে না। এটা দেশগুলোর জন্য এক ধরনের সীমাবদ্ধতা।