সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

আগামী নির্বাচনকে বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে দেখছে বিএনপি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আগামী নির্বাচনকে বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে দেখছে বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে দেখছে বিএনপি। নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতার বাইরে। আগামীতে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না এলে নেতা-কর্মীদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা এও বলছেন, গতবারের মতো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। আমরা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের বিষয়টিকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছি।

সামগ্রিক প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার মতো প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। তবে আমরা চাই সেই নির্বাচনটা হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এ মুহূর্তে আমাদের একমাত্র চাওয়া হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। শুধু বিএনপি নয়, দেশের প্রতিটি মানুষের চাওয়াও তাই। সে লক্ষ্যে আমরা বৃহত্তর ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েছি। সরকার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই নিরপেক্ষ সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করা হবে।

জানা যায়, বিএনপি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনী প্রস্তুতির দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা না থাকলেও ভিতরে ভিতরে কাজ শুরু করেছে তারা। বিএনপি নেতারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে তাঁদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। এজন্য তাঁরা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করে এবার অলআউট মাঠে নামতে চান তাঁরা।

দলটির নীতিনির্ধাকরা জানান, আগামী নির্বাচন যে প্রক্রিয়াতেই হোক না কেন সেজন্য দলের প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের পাশাপাশি ভিতরে ভিতরে চলছে সেই প্রস্তুতি। দল গোছানোর পাশাপাশি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্তে গোপনে চলছে কাজ। দলের নীতিনির্ধারকরা নানা মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে প্রতি আসনে দুজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই করছেন। একটি সূত্র জানায়, প্রতিটি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এখন থেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দলীয় কর্মসূচি পালনসহ জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যুতে নিজ নিজ এলাকায় থাকার মৌখিক নির্দেশ

 দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। নির্বাচন কমিশনও চূড়ান্ত রোডম্যাপ প্রস্তুত করছে। সে হিসেবে নির্বাচনের বাকি আছে ১৭ মাস। বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার মতে, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় আন্দোলন বিএনপির জন্য ‘বাঁচা-মরার লড়াই’। ‘হয় এসপার, না হয় ওসপার’- এমন মনোভাব নিয়েই এগোচ্ছে বিএনপি।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে। এরপর দুটি জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীন হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে ভোট বর্জন করে বিএনপি। সে সময় হরতাল-অবরোধের মতো রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুললেও কার্যত তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয় দলটি। তবে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে শেষ পর্যন্ত গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করে নির্বাচনে যায় বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সে নির্বাচনে সাতটি আসন পায় দলটি। প্রথমে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত সংসদে যোগ দেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত বিএনপির সাত সংসদ সদস্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর