মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

দোকানপাট বন্ধ করেও কমেনি লোডশেডিং

রাত ৮টার পর উল্টো বাড়ছে চাহিদা, পূরণ হয়নি দেড় হাজার মেগাওয়াট সাশ্রয়ের আশা

শামীম আহমেদ

রাত ৮টায় দোকানপাট, শপিং মল বন্ধ ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আশা করলেও তা পূরণ হয়নি। উল্টো রাত ৮টা থেকে বিদ্যুতের চাহিদা প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। ১৮ জুলাই দোকানপাট বন্ধের ঘোষণার পর শুধু এক দিনই (২০ জুলাই) রাত ৮টা থেকে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছিল। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত।

দেশের বাজারে ডলার সংকট ও জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতিতে সম্প্রতি জ্বালানি তেল সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেয় সরকার। লাগাম টানা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ১৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিং মল খোলা থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ওই দিনই রাত ৮টার পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা, পল্টন, ফকিরাপুলসহ বেশ কিছু এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনেকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ডিপিডিসি। তবে পরদিনই রাত ৯টায় বিদ্যুতের চাহিদা আগের দিনের একই সময়ের চেয়ে ৯৭৯ মেগাওয়াট বেড়ে যায়। ওই সময়ে সারা দেশে মোট লোডশেডিংয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট। রাত ১০টায় গিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা ১০০ মেগাওয়াট কমে। এরপর সারা দেশে বিভিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি জোরেশোরে অভিযানে নামলে ২০ জুলাই বুধবার রাত ৮টায়ই বিদ্যুতের চাহিদা ৩০ মিনিট আগের তুলনায় ১০৬ মেগাওয়াট কমে যায়। ৯টায় আরও ১৫ মেগাওয়াট, ১০টায় ১৯ মেগাওয়াট ও ১১টায় ২৫৭ মেগাওয়াট কমে যায়। এরপর আর কোনো দিন রাত ৮টা থেকে বিদ্যুতের চাহিদা কমেনি, উল্টো বেড়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রথম দুই দিন কড়াকড়ি থাকলেও পরবর্তীতে বড় শপিং মলগুলো ছাড়া প্রায় সবকিছুই গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকছে। এমনকি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেও কমেনি আলোকসজ্জা ও এসির ব্যবহার। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, শপিং মল রাত ৮টায় বন্ধের চেয়ে দিনের বেলায় খোলা রাখার সময় সীমিত করলে বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় হতো। কারণ দিনে কাস্টমার কম থাকে। রোদের কারণে তাপমাত্রা বেশি থাকে। এসির ব্যবহার বেশি হয়।

ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যানুযায়ী, ২১ জুলাই বিদ্যুতের চাহিদা কমতে শুরু করে রাত ১০টায়, ২২ জুলাই রাত ১২টায় এবং ২৩ ও ২৪ জুলাই রাত ১০টায়। এদিকে ১৭ ও ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দেশে কোনো লোডশেডিং না থাকলেও ১৯ জুলাই এই সময়ে লোডশেডিং ছিল ২ হাজার ৩ থেকে ২ হাজার ৪২৬ মেগাওয়াট। দোকানপাট বন্ধের জন্য ১ ঘণ্টা সময় হাতে রেখে রাত ৯টায় সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ও লোডশেডিং ছিল যথাক্রমে ১৮ জুলাই ১৩ হাজার ২২১ মেগাওয়০ট, লোডশেডিং ছিল না, ১৯ জুলাই চাহিদা ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ২ হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট, ২০ জুলাই চাহিদা ১৩ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ১ হাজার ৭০ মেগাওয়াট, ২১ জুলাই চাহিদা ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ১ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াট, ২২ জুলাই চাহিদা ১৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ৪১২ মেগাওয়াট, ২৩ জুলাই চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট, লোডশেডিং ১ হাজার ৭৮৩ মেগাওয়াট ও ২৪ জুলাই ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ১ হাজার ২৬৩ মেগাওয়াট। এর মধ্যে শুধু শুক্রবার লোডশেডিং ছিল ৬০০ মেগাওয়াটের নিচে। তবে এদিন রাত ৮টায় বিদ্যুতের চাহিদা ৫০০ ও ৯টায় ৩৫০ মেগাওয়াট বৃদ্ধি পায়। ১০টায় চাহিদা ৫০ মেগাওয়াট কমে। সবশেষ ২৪ জুলাই রাত ৮টায় ৫০ ও ৯টায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

 

সর্বশেষ খবর