রাজধানীতে বিকাশ পরিবহনের একটি বাস থেকে লাফ দিয়ে নেমে নিপীড়কের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা ফেসবুকে লিখেছেন। তার ওই ফেসবুক পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনা ঘটে রবিবার রাত ৯টায়। এদিকে, চলন্ত বাসে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে বিকাশ পরিবহনের চালক মাহবুবুর রহমান ও হেলপার কাওসার আহমেদকে গ্রেফতার করেছে লালবাগ থানা পুলিশ। বুধবার ঢাকার আশুলিয়া থেকে মাহবুবুর ও গতকাল লালবাগ থেকে কাওসারকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় বিকাশ পরিবহনের সেই বাসটিও (ঢাকা মেট্রো-ব ১২-০৬০৫)। গণমাধ্যমকে ওই ছাত্রী বলেন, ঘটনার পর থেকে ট্রমার মধ্যে আছি। লাশ হয়ে যেতে পারতাম, ধর্ষণের শিকার হতে পারতাম। যেকোনো কিছুই ঘটতে পারত। আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে গেছি। বলে বোঝাতে পারব না আসলে আমি কেমন বোধ করছি। চোখের সামনে অন্ধকার বাস ভাসতেছে। জাস্ট এতটুকুই বলব, আলহামদুলিল্লাহ, আই অ্যাম সেইফ। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে খ কালীন কাজ শেষ করে আজিমপুরের বাসায় ফেরার জন্য রবিবার রাত সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডি থেকে বাসে উঠেছিলেন। তিনি বাসের মাঝামাঝি একটি সিটে বসেছিলেন। সারা দিনের ধকল ও যানজটের জন্য বাসে চড়ে বাইরের আওয়াজ থেকে রেহাই পেতে তিনি কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনেন। এর মধ্যে খানিকটা ঝিমুনির মতোও চলে এসেছিল। হুট করেই বুঝতে পারলাম আমার হাঁটুর ওপর কারও হাতের স্পর্শ। তাকিয়ে দেখলাম, পুরো বাস খালি, আর আমার পাশে একজন বসা। বাসের সব লাইট বন্ধ। তাকানোর পর সেই লোক (হেলপার) একটু ওপরে হাত দেয়। জোরে ধাক্কা দিয়ে সেই লোককে সিট থেকে নিচে ফেলে দিই। দাঁড়াতে দাঁড়াতে মুঠোফোনটাকে ব্যাগে ঢোকাই। চিৎকার করতে থাকি বাস থামানোর জন্য। কিন্তু চালক বা হেলপার কোনো কথা বলছে না। আমি সামনের দিকে এগোতে গেলে হেলপার দুই হাত দিয়ে আমার মুখ ও হাত চেপে ধরে। পা ও কনুই দিয়ে হেলপারের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে থাকি। পা দিয়ে হেলপারের পায়ে জোরে আঘাত করি। হুট করে মনে হলো হেলপার যে হাত ধরে ছিল তা একটু আলগা হয়েছে। বাসের দরজা, জানালা সব বন্ধ ছিল। তবে সামনের দিকে আসতে আসতে সড়কের গতিরোধকের জন্য বাসের গতিও খানিকটা কমাতে বাধ্য হয়েছিল চালক। যখন দেখলাম বাসের দরজায় সিটকিনি নেই, কোনো কিছু চিন্তা না করে দরজা খুলে লাফ দেই। বাসে চড়ে অভ্যস্ত বলে তখন আর বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। নেমেই দৌড় দিলাম। এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের এডিসি মো. কুদরত-ই-খুদা জানান, ভুক্তভোগী ঘটনাটি ফেসবুকে শেয়ার করে একটি পোস্ট দেন। এরপর প্রাথমিক অনুসন্ধানে ভুক্তভোগীকে চিহ্নিত করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাৎক্ষণিক সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বিকাশ পরিবহনের বাসটি শনাক্ত করা হয়। চালক মাহবুবুর রহমান ও হেলপার কাওসার আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় বাসটি। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী ২৪ জুলাই রাত সাড়ে ৮টায় নিজ বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে ধানমন্ডি থেকে আজিমপুরগামী বিকাশ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন।
তিনি কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে শুনতে একপর্যায়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। পরে দেখতে পান, বাসে কোনো যাত্রী নেই। পাশের সিটে হেলপার বসা। সে ভুক্তভোগীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করে। হেলপারকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করেন তিনি। বাস থেকে নামার চেষ্টা করলে হেলপার পেছন থেকে তার মুখ চেপে ধরে। ভুক্তভোগী ড্রাইভারকে বাস থামাতে বলেন। ড্রাইভার বাস না থামিয়ে ইডেন কলেজের সামনে দিয়ে আজিমপুরের দিকে যেতে থাকে। একপর্যায়ে আজিমপুর গার্লস স্কুলের কাছে এসে বাস কিছুটা ধীরগতির হলে ভুক্তভোগী লাফ দিয়ে নেমে আত্মরক্ষা করেন।
মামরার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার এসআই আসিফ উজ জামান জানান, এ ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় বাসের চালক মাহবুবুর রহমানকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে আদালত তার একদিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।