দৈনিক দেশ রূপান্তর সম্পাদক খ্যাতিমান সাংবাদিক অমিত হাবিব আর নেই। গত রাত ১১টার দিকে তিনি রাজধানীর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। সাংবাদিক অমিত হাবিবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তাঁরা শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তাঁর মৃত্যু সংবাদে দেশের সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে শোক প্রকাশ করেন। অনেকে ছুটে যান হাসপাতালে। ২১ জুলাই সন্ধ্যায় কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অমিত হাবিবকে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি নিবিড় চিকিৎসা পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ডাক্তার বলেছিলেন, রক্তনালি ছিঁড়ে ব্রেনের ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এমনকি আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর তিনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর ডায়াবেটিসও ছিল। দেশ রূপান্তরের সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে অমিত হাবিব দৈনিক কালের কণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। এর আগে ২০০৯ সালে দৈনিক সমকালের প্রধান বার্তা সম্পাদকের পদ ছেড়ে তিনি নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কালের কণ্ঠে যোগ দেন। দেশ রূপান্তরের সূচনালগ্ন থেকে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিন দশকের কর্মজীবনে বার্তা সম্পাদক হিসেবে দক্ষতার জন্য গণমাধ্যমজগতে বিশেষ খ্যাতি ছিল তাঁর। অমিত হাবিব ১৯৮৭ সালে একই সঙ্গে প্রতিবেদক ও সাব-এডিটর হিসেবে খবর গ্রুপ অব পাবলিকেশন্সে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে সাপ্তাহিক পূর্বাভাস পত্রিকায় সাব-এডিটর হিসেবে, ১৯৯১ সালে আজকের কাগজে সিনিয়র সাব-এডিটর ও ভোরের কাগজ প্রকাশিত হলে তাতে একই পদে যোগ দেন এবং অল্প দিনের মধ্যে পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও পরে বার্তা সম্পাদক হন। ২০০৩ সালে দৈনিক যায়যায়দিনে প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৭ সালে চীনের আন্তর্জাতিক বেতারে বিদেশি বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দিয়ে বেইজিংয়ে কাজ করেন তিনি। পরে ওই চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে দৈনিক সমকালে প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। অমিত হাবিবের জন্ম ১৯৬৪ সালের অক্টোবরে যশোরে। যশোর এম এম কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন। তবে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা তাঁর শেষ হয়নি। সংসার জীবন শুরু করলেও তা স্থায়ী হয়নি। তাঁর কোনো সন্তান নেই। আজ সকাল ১০টায় তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা দেশ রূপান্তর অফিস চত্বরে এবং শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাঁর লাশ নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে নিয়ে যাওয়া হবে।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের শোক
গত রাতে এক শোকবার্তায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা পেশার প্রতি অমিত হাবিবের নির্মোহ ভালোবাসা ও নিরলস পরিশ্রম একজন সংবাদকর্মী থেকে তাঁকে কালক্রমে একজন সফল সম্পাদকে পরিণত করে। সংবাদ চয়ন ও উপস্থাপনে তাঁর মুনশিয়ানা একই সঙ্গে পাঠক এবং নীতিনির্ধারকদের নজর কাড়ত। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর হাত দিয়ে একাধিক জনপ্রিয় দৈনিক আত্মপ্রকাশ করেছিল। তাঁর সর্বশেষ ছিল দৈনিক দেশ রূপান্তর। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।