১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার অজানা তথ্য নিয়ে এবার মুখ খুললেন শেখ জামাল ক্লাবের পরিচালক নজিব আহমেদ। তিনি আশির দশক থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, শেখ জামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেকেন্ড বেঙ্গলের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। সেখানে একজন কোম্পানি কমান্ডার ছিল, একজন সিও ছিল, এ ছাড়াও তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছিল। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের একজন কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে জানতে চাই, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে শেখ জামালের সুরতহাল রিপোর্ট করা হয়েছিল কি না? তাকে যে পাওয়া গেল না, তিনি যে মারা গেল, তার কোনো খবর সেনাবাহিনী নিয়েছিল কি না? তার সার্ভিস বুকে কী লেখা আছে? তৎকালীন সেনাবাহিনীর যেসব কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন তারা তখন কী দায়িত্ব পালন করেছিলেন? তারা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন কি না? নজিব আহমেদ বলেন, কয়েকদিন আগে আইনমন্ত্রী বলেছেন একটি কমিশন করার জন্য, যা ১৫ আগস্টের সত্য উদঘাটনে কাজ করবে। সে সময় ৪৬ ব্রিগেডের একজন কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তিনি সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ৪৬ ব্রিগেডের সেদিন কী অবস্থা ছিল, সে ব্যাপারে অনেক কিছু জানা যাবে। শেখ জামালের কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম। তার ভূমিকা কী ছিল সেটিও জানা দরকার। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় যে প্রাপ্য সম্মান ছিল শেখ জামালের, সেটি সেনাবাহিনী তাকে দিয়েছিল কি না? যদি না দিয়ে থাকে তবে সেদিন যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের আইনের আওতায় এনে নতুন করে বিচার করার সুযোগ রয়েছে কি না তা আইনমন্ত্রী ও বর্তমান সেনাবাহিনীর দায়িত্বরতরা বিবেচনা করবেন। নজিব আহমেদ বলেন, ৪৬ ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল (অব.) শাফায়াত জামিল ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ অনেক কর্মকর্তাকেই জিয়াউর রহমান পুরস্কৃত করেছিলেন। তারা কীসের পুরস্কার পেয়েছিলেন? আজ জাতির কাছে এই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। আরও পরিষ্কার হওয়া উচিত বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার যেসব মন্ত্রী খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন তাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল, কে বন্দুক ঠেকিয়ে নিয়ে গিয়েছিল? কেন তারা ১৫ আগস্ট কাপুরুষের মতো আত্মগোপনে গিয়েছিলেন? কেন তারা তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করেননি? আজ যাদের আমরা আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে মনে করি তারা কী আসলে নেতা, নাকি ভিলেন ছিল? নাকি বেনিফিশিয়ারি ছিল? একটি কমিশন করে এদের সবার অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তাদের ভূমিকা ঐতিহাসিক কারণে আগামী প্রজন্মের জন্য লিপিবদ্ধ করা হোক, এটি আমার দাবি। শেখ জামাল ক্লাব পরিচালক নজিব আহমেদ আরও বলেন, বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ একটি টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার বক্তব্য মতে, তিনি সেদিন বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনি বজলুল হুদা তাকে রিসিভ করেছিলেন। ৪৬ ব্রিগেডের অফিসার হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল বিদ্রোহ দমন করা। কিন্তু তিনি দমন না করে জিয়াউর রহমানের নির্দেশে খুনিদের উৎসাহিত করতে, খুনিরা খুন করতে পারছে কি না তা দেখতে সরেজমিনে গিয়েছিলেন। মেজর হাফিজ তো ৪৬ ব্রিগেডের কর্মকর্তা ছিলেন। আজ তিনি অনেক বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু তিনি সেদিন কী দায়িত্ব পালন করেছিলেন? এই ব্যর্থতার দায় তো তাকেও নিতে হবে। আগামী প্রজন্মের কাছে এদের মুখোশ উন্মোচন করার দাবি জানাই। একটি আইন কমিশন করে যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিশিয়ারি ছিল, যারা কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হোক।