সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান অবৈধ ঘোষণা করে সেটি বাতিল করে দিয়েছেন হাই কোর্ট। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ রায় দেন। এ রায়ের ফলে এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতি লাগবে না বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী। হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মণ্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা একটা সুরক্ষা বিধান যুক্ত করা হয়েছিল। আমরা সেটি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলাম। আদালত সে বিষয়ে রুল জারি করেছেন। তিনি বলেন, ওই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আজ (গতকাল) রায় ঘোষণা করেছেন। রায়ে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪১(১) ধারায় যেটা সংযুক্ত করা হয়েছিল তাকে বেআইনি, মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আদালত বলেছেন সংবিধানের ২৭-এ (অনুচ্ছেদ) আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, এটা সুনির্দিষ্ট করে বলা আছে, কিন্তু তার পরও ৪১ (১) ধারা যুক্ত করে সরকারি কর্মচারীদের একটা সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবেই সংবিধানসম্মত নয়। এ আইনটি অসদুদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমরা আদালতকে বলেছি এ আইনের একটাই উদ্দেশ্য- তা হলো, সরকারি কর্মচারীদের সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা করে তাদের একটা বিশেষ শ্রেণি হিসেবে দেখিয়ে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। অপরাধ করলেও যাতে তারা সেই অপরাধের সাজা না পায়। বিশেষ করে এ আইনের মাধ্যমে দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে।’ সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪১(১)-এর বিধান চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর রুল জারি করে হাই কোর্ট। রুলে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৬(১) (২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়- ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।’ এ বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে এ রিট করা হয়। ওই রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন হাই কোর্ট।
