শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বাম জোটের হরতালে পুলিশি বাধার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাম জোটের হরতালে পুলিশি বাধার অভিযোগ

পল্টনে হরতাল সমর্থক ও যাত্রীদের মধ্যে হাতাহাতি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, নিত্যপণ্যের দাম ও পরিবহন ভাড়া কমানোর দাবিতে গতকাল সারা দেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবস হরতাল ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। যান চলাচল ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। খোলা ছিল দোকানপাট। তবে সকাল থেকেই রাজপথে বক্তব্য-স্লোগান-মিছিলে সরব ছিলেন জোটের নেতা-কর্মীরা। সড়ক অবরোধ ও যানবাহন থামানো নিয়ে রাজধানীর কয়েক স্থানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। হরতাল-পরবর্তী সমাবেশে জোট নেতারা অভিযোগ করেন, হরতালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সরকারদলীয় সংগঠন বাধা প্রদান করেছে। আটক করা হয়েছে জোটের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে।  দাবি আদায়ে আগামীতে অবরোধ, ঘেরাওসহ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। বাম জোটের ডাকা আধাবেলা হরতাল কর্মসূচি কেন্দ্র করে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও পল্টন মোড়ে সকাল থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। পল্টন মোড়ের দক্ষিণ পাশে সাঁজোয়া যানও রাখা ছিল। গতকাল ভোর ৬টায় বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পল্টন মোড় থেকে প্রথম মিছিল বের করে জিরো পয়েন্ট, বিজয়নগর পানির ট্যাংক ঘুরে আবার পল্টন মোড়ে এসে অবস্থান নেন। এ সময় বাম জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সহসাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের ডা. হারুন উর রশীদ, বাসদের (মার্কসবাদী) ফখরুদ্দিন আতিক, মানস নন্দী, সীমা দত্তসহ বাম জোটের শরিক বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। হরতালের সমর্থনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পাশাপাশি পল্টনে অবস্থান নেন নয় সংগঠন, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা পল্টন মোড় অবরোধ করলে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। বেলা ১১টার দিকে হরতালকারীরা যানবাহন থামিয়ে যাত্রী নামাতে গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের সদস্যরা পল্টন মোড়ের উত্তর দিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান চলাচলের সুযোগ করে দেন। এ ছাড়া সকালে শাহবাগ মোড় অবরোধ করতে গেলে হরতালকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। হরতাল-পরবর্তী সমাবেশে বাম জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় হরতালের আগের রাতে ছাত্রনেতা দীপক শীলসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল দিনাজপুরে ছাত্রনেতা লিটন রায়কে গ্রেফতার ও ঢাকার শাহবাগে হামলা চালিয়ে ছাত্রদের আহত করা হয়েছে। এতসবের মধ্যেও আমাদের নেতা-কর্মীরা ধৈর্য ধরে হরতাল সফল করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম, পরিবহনের ভাড়া কমানোর দাবিতে ও বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আগামীতে অন্যান্য বামপন্থী দল, সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ, ঘেরাওসহ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা জোর করে কোনো যানবাহন আটকাইনি। এত শান্তিপূর্ণ হরতাল কোনো দল করতে পারবে না। সাধারণ মানুষ হরতালে অংশগ্রহণ করে রাস্তায় না নামলেও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়েছে। মালিকরা জোর করে শ্রমিকদের গাড়ি চালাতে বাধ্য করছে।’ আমাদের সংবাদকর্মীদের পাঠানো হরতালের আরও খবর-

চট্টগ্রামে ঢিলেঢালা হরতাল : বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবস হরতাল চট্টগ্রামে ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। হরতাল চলাকালে সকালে নিউমার্কেট মোড় ও স্টেশন রোডে বাম জোটের নেতা-কর্মীরা পিকেটিং শুরু করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। পরে নিউমার্কেট মোড়, কোতোয়ালি, ফিরিঙ্গি বাজার, স্টেশন রোড এলাকায় মিছিল ও পথসমাবেশ করেন জোটের নেতারা। সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক শফিউদ্দিন কবির, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অশোক সাহা, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বরিশালে জনজীবন ছিল স্বাভাবিক : সদর রোডে সকালের দিকে বাম জোট কর্মীদের কিছু তৎপরতা থাকলেও নগরের অন্যান্য এলাকা কিংবা জেলায় এর কোনো প্রভাব ছিল না। হরতালের সমর্থনে নাজিরের পোল থেকে দক্ষিণ সদর রোড এলাকায় লাল পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন হরতাল সমর্থকরা। বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে বাধার সৃষ্টি করেন তারা। সকালের দিকে বাম জোট কর্মীরা সদর রোডের যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করলে দুর্ভোগে পড়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। তবে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থানে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে হরতাল হয়নি : বাম জোটের ডাকা আধাবেলা হরতাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে পালিত হয়নি। বাম দলের কোনো নেতা-কর্মীকে রাজপথে দেখা যায়নি। স্বাভাবিক নিয়মে মার্কেট, শপিং মলসহ দোকানপাট খোলা ছিল। ট্রেন ও যানবাহন চলাচল এবং সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ছিল স্বাভাবিক।

রংপুরে সবকিছু স্বাভাবিক ছিল : বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকে হরতালে সাড়া দেয়নি রংপুরের জনগণ। রংপুর নগরে হরতাল চলাকালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে হরতালের সমর্থনে নগরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাম জোটের নেতা-কর্মীরা। মিছিলের সময় জোটের নেতৃবৃন্দ দোকান মালিক ও অটোরিকশা চালকদের দোকানপাট, অটোরিকশা বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেন।

সিলেটেপ্রভাবহীন হরতাল : দেশব্যাপী আধাবেলা হরতাল সিলেটে ‘প্রভাবহীনভাবে’ পালিত হয়েছে। রাস্তাঘাটে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। দোকানপাট ও বিপণিবিতান ছিল খোলা। জিন্দাবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, আম্বরখানাসহ কয়েকটি স্থানে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীদের পিকেটিং করতে দেখা যায়। তাঁরা যানবাহন আটকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ প্রশাসন অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা সতর্ক অবস্থানে ছিল।

 

সর্বশেষ খবর