একের পর এক অনিয়ম করাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়! স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া, অনুমোদনহীন প্রোগ্রাম পরিচালনা, ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব, সার্টিফিকেট বাণিজ্যসহ অনেক সমস্যায় জর্জরিত বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বছরের পর বছর আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়া স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের। এরই মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৪২টিতে ভিসি, ৭৬টিতে প্রো-ভিসি ও ৪৬টিতে ট্রেজারার নেই! সব মিলিয়ে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা খাতে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে নানা চেষ্টা করেও সরকার সফল হতে পারছে না। এতে একদিকে যেমন একাডেমিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার মান ও স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ইউজিসি বলছে, অনিয়ম করতেই ইচ্ছা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পদগুলো শূন্য রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, ভিসি নেই এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- গণ বিশ্ববিদ্যালয়, দি পিপল’স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, সিটি ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি। এ তালিকায় আরও রয়েছে- আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ফেনী ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম ও ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজসহ আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। অভিযোগ রয়েছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বা অন্য কেউ উপাচার্যের স্বাক্ষর করে সনদ তুলে দিচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের হাতে। ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সনদপত্র বিতরণের ক্ষেত্রে উপাচার্যই সনদে স্বাক্ষর করবেন। উপাচার্যের নাম করে যারা সনদে স্বাক্ষর করছেন সেগুলো আইনগতভাবে বৈধ হচ্ছে না।’ শীর্ষপদ ফাঁকা থাকা এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আরও অনেক কার্যক্রমই বৈধ হচ্ছে না, যোগ করেন তিনি। প্রো-ভিসি নেই এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে- এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়া এ তালিকায় আরও রয়েছে- কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। ট্রেজারার নেই এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, পু ্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়।
ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার কোনোটিই নেই এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইউজিসির সর্বশেষ (৪৭তম) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা বেসরকারি ৯৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৩টিতে ভিসি, ৭৫টিতে প্রো-ভিসি ও ৪২টিতে ট্রেজারার ছিলেন না। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ৯৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭টিতে ভিসি, ৭১টিতে প্রো-ভিসি ও ৫১টিতে ট্রেজারারের পদ শূন্য ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ডের অনীহার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শীর্ষপদ ফাঁকা থাকছে। ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারারের নামের ক্ষেত্রে তিনটি নামের প্রস্তাব পাঠানোর কথা থাকলেও তারা তাদের নিজেদের মনঃপূত একজন ও যোগ্য নন এমন দুজনের নাম পাঠায়, যে কারণে তাদের প্রস্তাব পাস হতে বিলম্ব হয়। এই সময়ের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বসিয়ে অনেক অনিয়মে লিপ্ত থাকে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম ঠেকাতে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পাশাপাশি ইউজিসির ক্ষমতায়ন জরুরি।’