শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও কবি-কথাসাহিত্যিক মাহবুব তালুকদার। গতকাল বিকালে রাজধানীর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এর আগে বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সমবেত সাধারণ মানুষ তাঁকে একনজর দেখার জন্য ভিড় করেন। এরপর বারিধারার বাসায় তাঁর লাশ কিছুক্ষণ রাখা হয়। বিকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মাহবুব তালুকদারের মৃত্যু হয়। পরে লাশ বারডেম জেনারেল হাসপাতালে রাখা ছিল। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
জানাজায় ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মো. রুহুল আমিন। জানাজায় অংশ নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, ঢাকা জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলামসহ বিশিষ্টজন ও সর্বস্তরের মানুষ। জানাজার আগে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমার কাছে তাঁর পরিচয় একজন লেখক হিসেবে। ইতিহাস নিয়ে বেশ ভালো কিছু লেখা লিখেছেন। তিনি লেখক হিসেবেই যেন বেঁচে থাকেন।’ মাহবুব তালুকদারের ছেলে শোভন মাহবুব বলেন, ‘আমার বাবা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর কথা ও কাজে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে তাঁকে মাফ করে দেবেন।’ মাহবুব তালুকদারের কর্মজীবন ছিল বৈচিত্র্যময়। একসময় তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। যুক্ত ছিলেন শিক্ষকতায়। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন শব্দসৈনিক হিসেবে। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি যোগ দেন সরকারি চাকরিতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বঙ্গভবনে চারজন রাষ্ট্রপতির অধীনে তিনি কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাঁকে ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। আমলা হিসেবে অবসর নেওয়ার পর ২০১৭ সালে তিনি নির্বাচন কমিশনার মনোনীত হন। পাঁচ বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনে স্বতন্ত্র অবস্থানের কারণে তিনি ছিলেন প্রশংসিত। কমিশনের ভিতরে-বাইরে বক্তব্য দিয়ে পুরো মেয়াদে ছিলেন আলোচনায়। ১৯৬৮ সালে তাঁর উপন্যাস ‘ক্রীড়নক’ প্রকাশিত হয়। প্রথম কবিতার বই ‘জন্মের দক্ষিণা’ বের হয় ১৯৭৩ সালে। এরপর তিনি নিয়মিত লিখেছেন গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, কবিতা, রসরচনা, স্মৃতিকথা। পত্রিকায় কলামও লিখতেন। তাঁর বই ৪০টির বেশি। ২০১২ সালে তিনি লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। মাহবুব তালুকদারের রচিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো- ‘বঙ্গভবনে পাঁচ বছর’, ‘আমলার আমলনামা’, ‘বধ্যভূমি’, ‘চার রাজাকার’, ‘সুপ্রভাত আমেরিকা’, ‘কবিতাসমগ্র’ ইত্যাদি।