সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

ফজলে রাব্বির মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফজলে রাব্বির মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি

প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দল পরিবর্তনের পরও একটা এলাকা থেকে বারবার জিতে আসা মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতারই প্রমাণ। গতকাল বিকালে একাদশ জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনে প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। তার আগে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (ফজলে রাব্বি মিয়া) ছাত্রলীগ, যুবলীগ করেছেন, আওয়ামী লীগ করেছেন। এরপর জাতীয় পার্টিতে গিয়েছিলেন। পুনরায় তিনি আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসার পর আমরা তাকে সম্মান জানাই। পরে তাকে ডেপুটি স্পিকারের মর্যাদা দিয়েছিলাম। তিনি যে এলাকায় বারবার নির্বাচিত হয়েছেন সেই এলাকাটা ছিল অবহেলিত, মঙ্গা কবলিত। আমরা যখন ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি তখন সেখানে যাতে পরিস্থিতির উন্নয়ন হয় সে জন্য কাজ করেছি। তিনি পিছিয়ে পড়া ওই এলাকার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি (ফজলে রাব্বি মিয়া) যখন আমার কাছে আসতেন, নিজের এলাকা নিয়ে কথা বলতেন। ওই এলাকার আরও উন্নয়ন দরকার সে বিষয়ে কথা বলতেন। আসলে তিনি মানুষের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করেছেন। তার মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি যখন আমেরিকা চিকিৎসার জন্য গেলেন প্রতিদিন আমি তার স্বাস্থ্য বুলেটিন পেতাম। তার সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা আমাকে সব সময় তার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খোঁজখবর জানাতেন। কিন্তু একের পর এক অবনতির খবরই আসতে থাকে। তার মৃত্যুতে আমরা একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ানকে হারালাম। ভালো আইনজীবীকে হারালাম।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকাল ৫টায় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতেই শোক প্রস্তাব আনা হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাবটি পড়ে শোনান। এরপর মরহুমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অধিবেশনে উপস্থিত এমপিরা ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। এরপর নতুন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হয়। শোক প্রস্তাবে অংশ নিয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই আগস্ট মাস, আসলে আমাদের জন্য খুব কষ্টকর। ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমার মা ফজিলাতুন নেছা মুজিব, ভাইসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হারিয়েছি। শোকের মাসে আরেকটি শোক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়াকে হারিয়েছি।

 

আওয়ামী লীগের এমপি আমির হোসেন আমু বলেন, সদালাপী বিনয়ী মানুষ ছিলেন। ’৭৪ সালে প্রথম পরিচয়। এরপর দীর্ঘদিন দেখা হয়েছে। জাতির পিতাকে হত্যার পর জেল থেকে বের হয়ে এক দিন গাইবান্ধায় যাই, সেখানে যুবলীগের বিশাল একটি জনসভা করে দিয়েছিলেন। এরপর জাতীয় পার্টিতে গেলেন। পরে আবার আওয়ামী লীগে এসেছিলেন। বিজ্ঞ সংসদ সদস্য ছিলেন। বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, মরহুম এই রাজনীতিবিদ ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগ করলেও তিনি পরে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। হুইপ ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। রাজনীতিতে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে হারালাম। আওয়ামী লীগের মতিয়া চৌধুরী বলেন, ফজলে রাব্বি মিয়া জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। মানুষের জন্য উনার বাড়ির দরজা খোলা ছিল। কোনো কাজে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করতেন না। আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, উনি সাতবার এমপি হয়েছেন। তিনি সাদা মনের মানুষ ছিলেন। তাকে হারিয়ে আমরা সৎ, আদর্শবান রাজনীতিবিদ হারিয়েছি। আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ফজলে রাব্বি মিয়া আইনজীবী হিসেবে গাইবান্ধায় কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর সুপ্রিম কোর্টে সর্বশেষ পর্যন্ত ছিলেন। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন। জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, পাকিস্তান আমলে ফজলে রাব্বি মিয়ার সঙ্গে ছাত্রলীগ করেছি। যুদ্ধের পর যখন যুবলীগ প্রতিষ্ঠা হলো তখন যুবলীগে যোগদান করলেন। এরপর কাকতালীয়ভাবে জাতীয় পার্টিতে দেখা হলো তার সঙ্গে। আমাকে বলতেন আমরা কীভাবে আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে আসলাম, সে জন্য রিসার্চ দরকার। আওয়ামী লীগের শাজাহান খান বলেন, ফজলে রাব্বি মিয়া একজন অভিজ্ঞ সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি সংসদে মোনাজাত করতেন, মনে হতো অভিজ্ঞ একজন আলেম। আওয়ামী লীগের আ স ম ফিরোজ বলেন, তিনি ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। তার চলে যাওয়া অপূরণীয়। জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তিনি জাতীয় পার্টি থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সবার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতেন। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা গিনি, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তৃতা করেন।

সর্বশেষ খবর