পঞ্চগড়ে করতোয়ায় মাঝনদীতে যাওয়ার পরই নৌকাটি কাত হয়ে ডুবে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। স্থানীয় একজন তরুণ (২০) জানান, তিনিও ওই নৌকায় মন্দিরে যাওয়ার জন্য এসেছিলেন। তার সঙ্গে মোটরসাইকেল ছিল। কিন্তু নৌকায় যাত্রী অনেক বেশি ছিল, যে কারণে আর যেতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, মাঝ নদীতে যাওয়ার পরই নৌকাটি কাত হয়ে উল্টে যায়। তখন এপারে যারা ছিলেন তাদের অনেকেই নেমে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে অবশ্য পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিস আসে। আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। নৌকাডুবির পর পাড় থেকে অনেকেই নৌকা নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন।
এমন মৃত্যু দেখেনি কেউ : পঞ্চগড়ের বোদা দেবীগঞ্জ এলাকা এখন নিস্তব্ধ। গোটা জেলায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এক সঙ্গে এত মৃত্যু এই জেলায় ঘটেনি কখনো। মৃতদের অধিকাংশই নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ। অনেক আশা নিয়েই মহালয়ার দিনে পূজা অর্চনায় যাচ্ছিলেন তারা। পূজার আগে অনেকে ¯œান সেরে নিয়েছেন। নিয়ম আছে মন্দিরে ঢোকার আগে ¯œান সারতে হবে। তারপর পূজার মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে আহ্বান জানাবেন তারা। অনেকে যাচ্ছিলেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। নিজের, আত্মীয়-স্বজনের মঙ্গল কামনায় অনেকে গিয়েছিলেন। অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও যাচ্ছিলেন পূজা দেখতে।
কিন্তু মন্দিরে পৌঁছতে পারেনি শতাধিক তীর্থযাত্রী। নৌকাটি প্রায় পাড়ে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ বাঁক ঘোরাতে গিয়ে নৌকাটি উল্টে যায়। তারপর সব যাত্রী পানিতে পড়ে যায়। অনেকের বাবা ফিরেছে কিন্তু সন্তান মারা গেছে। অনেকের মা মারা গেছে, সন্তান তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। মাড়েয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমিনও ওই নৌকার যাত্রী ছিল। মহালয়ার ছুটিতে কয়েক বন্ধু মিলে পূজা দেখতে যাচ্ছিল। ডুবে যেতে যেতে কোনো মতে বেঁচে ফিরেছে সে। তার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলে- ঘাটের কাছাকাছি আসতেই নৌকাটি কাত হয়ে যায়।ওখানে নদীটা ১৫ থেকে ২০ ফিট গভীর। আমরা যখন সবাই ডুবে যাই তখন আমাকে ৪/৫ জন বাঁচার জন্য আঁকড়ে ধরে। আমি নিজেকেও বাঁচাতে পারতাম না। পরে আমি আরও গভীরে ডুবে যাই। এক সময় ওরা আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি সাঁতরে পাড়ে উঠি।
বোদা উপজেলার বড় শশি ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক মন্দির বদেশ্বরি মন্দিরে প্রতিবছর মহালয়ার দিনে হাজার হাজার সনাতন ধর্মীয় মানুষ পূজা নিবেদনের জন্য আসেন। গতকালও তাই। ওই মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা অনেক থাকলেও সহজ রাস্তা করোতোয়া নদীর আওলিয়া ঘাট। দীর্ঘকাল ধরে এই ঘাট দিয়ে মানুষ পারাপার হয়ে আসছে। গতকাল দুপুরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকাটি যাত্রা করে। মাত্র ৬০০ ফিট পানি পেরুতে হয়। তারপরেই ঘাট। কিন্তু পার হতে পারেনি নৌকাটি।