বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ডিজি মামুনের বিদায়ী সংবাদ সম্মেলন

আইনের সীমা র‌্যাব অতিক্রম করে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইনের সীমা র‌্যাব অতিক্রম করে না

যেখানে প্রয়োজন কেবল সেখানেই শক্তি প্রয়োগ করে র‌্যাব। আইন যে ক্ষমতা র‌্যাবকে দিয়েছে, তার ভিতরেই সদস্যরা কাজ করেন বলে দাবি করেছেন র‌্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে আসেন র‌্যাবপ্রধান। সেখানে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধজ্ঞা নিয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, নিষেধাজ্ঞার কারণেই ইদানীং র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেছে কি না? জবাবে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে র‌্যাবের নেতৃত্ব দিয়ে আসা মামুন বলেন, তিনি তা মনে করেন না। বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কেন আমরা দাঁড়াব। যখন আমরা আক্রান্ত হই, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে কিংবা মানব পাচারকারীরা যখন আমাদের ওপর আক্রমণ করে তখন আমরা প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আইন যে ক্ষমতা র‌্যাবকে দিয়েছে, তা আমরা অতিক্রম করি না। যেখানে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই আমরা শক্তি প্রয়োগ করি। একটা লোক দৌড় দিল, ধাক্কা দিল, তাকে গুলি করে দিতে হবে? সিচুয়েশন যা ডিমান্ড করে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ডিসেম্বরে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক পুলিশের বিদায়ী আইজি ড. বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র‌্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নামও সে তালিকায় ছিল। র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে মামুন বলেন, ‘আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করি। অপরাধীরা যে কত কুখ্যাত, তাদের সামনে যা আসে সব বাধা উপেক্ষা করে তারা অপরাধ সংঘটিত করতে চায়। আমরা যখন তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াই, তখন অপরাধীরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে অপরাধ ঘটাতে চায়।’ ক্রসফায়ার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেই পুরনো ব্যাখ্যা এ সংবাদ সম্মেলনেও দেন নতুন পুলিশপ্রধান মামুন। তিনি বলেন, ‘যখনই অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন কিন্তু আমরা (র‌্যাব) থাকি না। প্রথমে থানা পুলিশ আসে। ম্যাজিস্ট্রেট আসেন। সুরতহাল হয়। লাশ মর্গে নেওয়া হয়। অভিজ্ঞ চিকিৎসক ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। থানায় মামলা হয়। উন্মুক্ত আদালতে বিচার হয়। দুই পক্ষের বক্তব্যের ভিত্তিতে আদালত সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত দেন। এসবের মধ্যে র‌্যাবের কোনো ভূমিকা থাকে না। সরকার-গণমাধ্যম এসব মনিটরিং করে। এখানে র‌্যাবের কতটুকু ভূমিকা আছে তা আমারও প্রশ্ন। আমরা যা করি স্বচ্ছতার সঙ্গে করি।’ দুই বছর পাঁচ মাস র‌্যাবের দায়িত্ব সামলানো চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযানে আমাদের সদস্যরাও আহত হন, প্রাণহানি-অঙ্গহানিও ঘটে। যাদের অঙ্গহানি ঘটেছে, তাদের চিকিৎসা আমরা করেছি। আমাদের দায়িত্ব চ্যালেঞ্জিং, যে কারণে আমার অনেক সহকর্মী চাকরি পর্যন্ত হারান। আমি বিশ্বাস করি, আগামীতেও র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।’ মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কেবল র‌্যাবের নয়, কেবল বাংলাদেশেরও নয়; বিশ্বজুড়েই এ যুদ্ধ চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজের কারণে কারাগারে যেসব আসামি, এর বেশির ভাগই মাদকের। প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের পর যেখানেই মাদক সেখানেই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শুধু র‌্যাব নয়, সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই ধরছে। তিনি বলেন, ‘মাদকের বিস্তার বন্ধে সচেতনতা দরকার সবার ঘর থেকেই। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান কোথায় যাচ্ছে তা খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদের। ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই একটার সঙ্গে আরেকটা জড়িত। এটা বন্ধে কাজ করছি। মাদক নিয়ন্ত্রণে নেই তা বলার অবকাশ নেই। যেখানেই খবর পাচ্ছি সেখানেই অভিযান চালাচ্ছি। আমরা যদি মাদকের বিরুদ্ধে ব্যর্থই হতাম, তাহলে কারাগারে এত মাদকের আসামি থাকত না। সবাই সোচ্চার হলে অচিরেই মাদকমুক্ত সমাজ দেখতে পাব বলে বিশ্বাস করি।’ বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যে সমালোচনা রয়েছে, সে প্রশ্নে নতুন আইজিপি মামুন বলেন, ‘মাঝেমধ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। কেউ এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করে।

 আমি মনে করি অতীতে যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পেরেছি, তেমনি অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীতেও আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’ নতুন পুলিশপ্রধান মামুন বলেন, ২০২১ সালে নয় জঙ্গিকে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় র‌্যাব জোরালো অভিযান চালিয়ে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করে। সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জলদস্যু আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দস্যুমুক্ত হয় সুন্দরবন। দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের প্রয়োজন অনুযায়ী মাছ ধরার নৌকা ও জাল, ইঞ্জিনচালিত নৌকা, গবাদি পশু, মুদি দোকান এবং ঘর বিতরণ করা হয়। জলদস্যুমুক্ত সুন্দরবনের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে র‌্যাবের জোরালো অভিযান ও প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাঁশখালী, মহেশখালী, কুতুবদিয়া অঞ্চলের ১২টি জলদস্যু বাহিনীর ৭৭ দস্যু বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদসহ র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্বের সময় প্রায় ৩৬ হাজার মাদক কারবারিকে গ্রেফতার এবং ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের মাদক উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় নতুন মাদক ক্রিস্টাল আইসের সর্ববৃহৎ ১২ কেজির চালান। একই সময়ে প্রায় ২ হাজার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও ৩ হাজারের অধিক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। গত দুই বছরে ৮ শতাধিক মানব পাচারকারী এবং ৬ শতাধিক নারী ও শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ সংক্রান্ত অপরাধে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়।’ প্রসঙ্গত, ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে মনোনীত করা হয়। তিনি আগামীকাল (৩০ সেপ্টেম্বর) আইজিপি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। এর আগে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল এলিট ফোর্স র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর