মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ফের আক্রমণে রাশিয়া

♦ ইউক্রেনজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, নিহত ১০, আহত ৬০ ♦ কিয়েভে জার্মান কনস্যুলেট ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত

প্রতিদিন ডেস্ক

ফের আক্রমণে রাশিয়া

ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেবে গেছে সড়ক -এএফপি

ক্রিমিয়ার কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রতিশোধ হিসেবে রাশিয়া গতকাল সকালে ইউক্রেনজুড়ে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দিনভর জ্বলেছে বিভিন্ন স্থাপনা, পর্যটন কেন্দ্র, অফিস, কলকারখানা এবং সরকারি অবস্থানসমূহ। কার্যত হামলার ঘটনায় বিধ্বস্ত এলাকায় পরিণত হয়েছে এক ডজনেরও বেশি জায়গা। অনেক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। তবে বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দিতে চাইছে। অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট  ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ক্রিমিয়ার সেতুতে সন্ত্রাসী হামলার পরিণাম ভোগ করতে হবে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, তাস, আলজাজিরা।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, সড়ক, পার্ক, পর্যটন কেন্দ্র এবং সরকারি স্থাপনা লক্ষ্য করে গতকাল সকালে রাশিয়া ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এ হামলা চালানো হয় রাজধানী কিয়েভ ছাড়াও খারকিভ, লাভিব, দনিপ্রো, জাপোরিঝঝিয়াসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে অঞ্চলগুলো দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিত হতে থাকে এবং জ্বলতে থাকে ভবন ও স্থাপনা। কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় অন্তত এক ডজন জায়গার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলো। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী প্রধান ইউরি ইহানাত জানান, এক শর বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রাশিয়া। এর মধ্যে ৪৩টি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব হয়। তিনি আরও জানান, রুশ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কাসপিয়ান এবং কৃষ্ণসাগর থেকে নিক্ষেপ করা হয়। এগুলো ছিল কালিবার, ইস্কান্দার এবং কেএইচ ১০১ ক্ষেপণাস্ত্র। আরেক খবরে বলা হয়, কিয়েভসহ ইউক্রেনের প্রায় সব বড় শহর ও অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিয়েভে জার্মান কনস্যুলেটের একটি ভবনও। জার্মান কনস্যুলেট ভবনে হামলার পর জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই ভবন ভিসা-সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা হতো। তবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সেখানে কার্যক্রম বন্ধ ছিল। হামলায় কনস্যুলেটের কেউ হতাহত হননি। এ ছাড়া হামলার বিষয়ে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ড্যানিস শিমহাল বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের ৮ অঞ্চলে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে। তিনি জানান, হামলায় লিভ ও খারকিভ শহর এবং খমেলনিতস্কি, সুমি ও তেরনোপিল অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ জন।

কিয়েভের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সারা শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে নানা প্রান্তে লাগাতার বিস্ফোরণ ঘটেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, রাশিয়ার এই হামলার ফলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কার্চ ব্রিজে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সেতুর একাংশ ধসে পড়ে। ওই বিস্ফোরণের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পুতিন বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আবারও ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালানো হলে একইভাবেই জবাব দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেছেন, ‘এ ঘটনাটি আসলে জঙ্গি আক্রমণ। ইউক্রেনের গোয়েন্দা দফতরের কারসাজির ফলেই সেতুতে বিস্ফোরণ ঘটেছে।’ এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘সকালে ইউক্রেনজুড়ে হামলা চালিয়ে রাশিয়া আমাদের দুনিয়া থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে।’

শহরে পারমাণবিক বোমা হামলার আশঙ্কা : এদিকে মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক গতকাল বলেছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ জয়ে মরিয়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের ছয়টি শহরে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করতে পারেন। ইউক্রেন যুদ্ধে যদি পরাজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে তখন এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন পুতিন। এ ছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সতর্ক করে বলেছেন, ১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে পারমাণবিক উত্তেজনা। ওয়েবার স্টেট ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক ও পারমাণবিক যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ এরিক জি সুইডিন বলেছেন, পুতিন সরাসরি গুরুত্বপূর্ণ ইউক্রেনীয় শহরে পারমাণবিক হামলা চালাতে পারেন। যুদ্ধের ফল বদলাতে মরিয়া হয়ে তিনি সহজে ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার সন্দেহ হলো অনেকে যেমন বলছেন প্রতীকী হামলা, তেমনটি হবে না। রণক্ষেত্রে ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র কঠিন এবং এ জন্য উচ্চমানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা প্রয়োজন হয়। এমন হামলা চালানোর মতো অবস্থায় নেই রাশিয়া। সম্ভাব্য পরিস্থিতি হতে পারে পশ্চিম ইউক্রেনের ৬টি শহরে এই অস্ত্র ব্যবহার। এই হামলায় পোল্যান্ড বা রোমানিয়া থেকে ইউক্রেনের অস্ত্র সরবরাহের রুট ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

মস্কো যা বলছে : রাশিয়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, পশ্চিমা যেসব দেশ ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং অতি উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করছে- তাদের জানা উচিত এটি মস্কোর জন্য রেড লাইন। দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং এ ধরনের উন্নত অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে তারা সেই রেড লাইন ক্রস করছে। যারা রেড লাইন ক্রস করছে তাদেরকে মস্কোর জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা অ্যালেক্সি পোলিশচুক বলেন, ‘যারা রেড লাইন ক্রস করছে, আমরা এরই মধ্যে তাদেরকে চিহ্নিত করেছি। এগুলো বিশ্লেষণ করে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা ঠিক করব। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাশিয়ার হাতে পর্যাপ্ত উপকরণ রয়েছে।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর