৭ অক্টোবরের ঘটনার পর ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন থমথমে। ওইদিন রাতে ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় ওই কলেজের ভিপি মুরাদসহ তিন শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ঘটনাকে এক পক্ষ সড়ক দুর্ঘটনা বললেও আরেক পক্ষ বলছে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। পুলিশ বলছে ঘটনার নিবিড় তদন্ত চলছে।
জানা যায়, সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে ডিভিএম ডিগ্রির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র আন্দোলন চলছিল।
আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস সজীবুল হাসানের সঙ্গে ফাহিম হাসান সনির হঠাৎ করেই বিরোধ শুরু হয়। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানতে পারে তাদের ক্যাম্পাসে সংস্কার ও অন্যান্য কাজ বাবদ কয়েক শ কোটি টাকার বরাদ্দ আসবে। তখন তারা বিভেদ ভুলে গিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-ইমরান গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করে তারা। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি ফাহিম হাসান সনিসহ তার অনুসারীরা। তারপর থেকেই হামলা করে ও মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দমনের চেষ্টা করতে থাকে জিএস সজীবুল হাসানসহ তার অনুসারীদের। সে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় তারা। পরবর্তীতে বড় ধরনের সহিংসতার পথ বেছে নেয় তারা। বিষয়টি সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাগর হোসেন ভিপি মুরাদ, জিএস সজীবুলসহ তাদের অনুসারীদের শহরের স্বর্ণকার পট্টি এলাকায় ডাকেন। সেখানে আলোচনা করে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলার শিকার হয় ভিপি মুরাদ, জিএস সজীবুলসহ তার অনুসারীরা। একপর্যায়ে সজীব পালিয়ে গেলেও তিনজন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এ ঘটনায় জিএস সজীবুল বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে মূল আসামিরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই ঘটনায় নিহত ভিপি মুরাদের স্ত্রী ও ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী সুমি খাতুন বলেন, আমার স্বামীকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারণ তিনি ছাত্রলীগের আবু সুমন বিশ্বাসের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। এ জন্যই প্রতিপক্ষ গ্রুপ কলেজের আন্দোলন ও টেন্ডার বরাদ্দ থেকে প্রতিহত করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, এর আগেও তার স্বামীকে হত্যার ছক করা হয়েছিল। ছাত্রলীগের একটা গ্রুপ পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়েও হেনস্তা করেছিল। এত বড় ঘটনা ঘটার পরও জেলা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কোনো নেতা আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এদিকে এ ঘটনার জন্য গত রবিবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান স্বাক্ষরিত এ প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফাহিম হাসান সনি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস হাদিউজ্জামান আরিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম অর্ক, সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী ফরহাদ হোসেন, মুস্তাকিম, ফরহাদ হোসেন-২ ও জেলা ছাত্রলীগের কর্মী নিয়নসহ সাতজনকে বহিষ্কার করেছে। তবে এই দায়সারা বহিষ্কারকে ভালোভাবে নেয়নি জেলা ছাত্রলীগের একাংশ। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব হাসান জানান, সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে কোনো কমিটি নেই। আর গ্রুপিংয়ের তো কোনো প্রশ্নই আসে না। ওই ঘটনায় নিহত সবাই ছাত্রলীগের কর্মী। এ মর্মান্তিক ঘটনায় আমি ব্যথিত। হতাহত পরিবারের পাশে আছি আমি। প্রাথমিক তদন্তে ছাত্রলীগের সাত নেতা-কর্মী জড়িত থাকার দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল বাশার জানান, নিবিড় তদন্ত চলছে। কীভাবে তিনজনের মৃত্যু হলো তদন্ত শেষে সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে।