সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

এমপির নেতৃত্বে হামলা গুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমপির নেতৃত্বে হামলা গুলি

জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে গতকাল এমপি মুক্তির নেতৃত্বে কালিয়া পৌর ভবনে হামলা। এ সময় এক ব্যক্তিকে অস্ত্র তাক করতে দেখা যায়। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে এ দৃশ্য। ভাঙচুর করা হয় গাড়িও -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আজ জেলা পরিষদ নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারা দেশে ৪৬২টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। নির্দলীয় এ নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা না করলেও শুধু চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কয়েক জেলায় জাপার সমর্থকরা প্রার্থী হলেও অনেক জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

এ নির্বাচনে এমপিদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। নড়াইল-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন কালিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক শামীম আহম্মেদ। এ এমপির বিরুদ্ধে গুলিবর্ষণ ও দলীয় প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অনেক প্রার্থী। অনেকের বিরুদ্ধে  আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এসেছে ইসির কাছেও। এদিকে ৬০ হাজার ৮৬৬ ভোটার (নির্বাচনম লী) এ নির্বাচনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য মিলিয়ে ৬৭১ জন জনপ্রতিনিধি বাছাই করবেন। তবে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২৬ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোট নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ৬৫ জন সাধারণ সদস্য ও ১৮ জন সংরক্ষিত সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সারা দেশে ৪৬২টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন; সবগুলো কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা, আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে বসে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করবে ইসি। সর্বশেষ ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম জেলা পরিষদের ভোট হয়েছিল। দেশের তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। পরে হাই কোর্টের আদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালীর নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এ ছাড়া ভোলা ও ফেনীর সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে আজ সোমবার ভোট গ্রহণ হবে ৫৭ জেলা পরিষদে। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে ৩১ জেলায়। গতকাল জেলা পরিষদে ভোটের প্রস্তুতি জানাতে এসে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, সিসিটিভির প্রচলনটা সাম্প্রতিক। আমরা এটার মাধ্যমে এখান থেকে নির্বাচন মনিটরিং করতে পারি। এটা একটা ভালো দিক। আমাদের তো কোনো পক্ষ নেই। আমরা চাই ভোটাররা যেন তাদের ভোটটা দিতে পারেন। সেই লক্ষ্যেই আমরা সিসি টিভির ব্যবহার করছি। জেলা পরিষদ ভোট কেমন হবে, তা (আজ) সোমবারই বলা যাবে বলে মন্তব্য করেন হাবিবুল আউয়াল। এ নির্বাচনে ভোটারদের মোবাইল নিয়ে ভোটকক্ষে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি গোপন কক্ষে ভোট দেওয়ার ছবি না তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসক। আর তার সহকারী হিসেবে থাকেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অন্য নির্বাচন কর্মকর্তারা।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- পৌর ভবনে গুলি ভাঙচুর এমপির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ : নড়াইল-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন দলটির অঙ্গসংগঠন কালিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সালামাবাদ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শামীম আহম্মেদ। কালিয়া পৌর ভবনে হামলা করে পৌর মেয়র ওয়াহিদুজ্জামান হীরা ও মামলার বাদী শামীম আহম্মেদকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ ও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সুবাস চন্দ্র বোসের নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি প্রাইভেট গাড়ি ভাঙচুরে প্রায় ৬ লাখ টাকার ক্ষতিসহ ব্যাপক তান্ডবের অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্ত করা হয়েছে এমপি কবিরুল হক মুক্তিসহ ৩৪ জনকে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নড়াইল-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শনিবার (১৫ অক্টোবর) রাত ১০টা ৪ মিনিটে নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোসের নির্বাচনী ক্যাম্পেইন শেষে পৌর মেয়র মো. ওয়াহিদুজ্জামান হীরার পৌরসভার অফিস কক্ষে বসে মেয়রসহ ৭-৮ জন আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা করছিলেন। এমন সময় হঠাৎ এমপি কবিরুল হক মুক্তি পৌর কার্যালয়ের সামনে এসে ৫০-৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ সময় এমপির নির্দেশে কালিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খান শামিমুর রহমান ওসি মামলার বাদীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ ছাড়া গফুর শেখ নামে এমপির অপর এক ক্যাডার কালিয়া পৌর মেয়রকে লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ছোড়ে। এরপর এমপি মুক্তির লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে থাকা বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত দুটি প্রাইভেট কার ভাঙচুরসহ তান্ডব চালায়। বিষয়টি পৌরসভার সিসিটিভি ফুটেজে ধারণ করা আছে এবং এটি ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে মামলার অভিযোগকারী নিশ্চিত করেছেন। মামলার বাদী সালামাবাদ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোসের নির্বাচনী প্রচারণা শেষে পৌর মেয়র মো. ওয়াহিদুজ্জামান হীরাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছিলাম। ঠিক তখনই এমপি মুক্তি ৫০-৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমাদের ওপর হামলা, গুলি বর্ষণ ও দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ভাঙচুর করে। আমি তাঁকে প্রধান আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’ কালিয়া পৌর মেয়র ওয়াহিদুজ্জামান হীরা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে এমপি মুক্তি তাঁর সমর্থিত সাধারণ সদস্য প্রার্থী রবিউল ইসলাম খানকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে একদল স্বসস্ত্র ক্যাডার বাহিনী পৌর ভবনে হামলা করে ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার গাড়ি ভাঙচুর করে। বিষয়টি সিসিটিভি ফুটেজে ধারণ করা আছে।’ কালিয়া থানার ওসি শেখ তাসমীম আলম বলেন, ‘কালিয়া পৌর ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নড়াইল-১ আসনের এমপি মহোদয়সহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

হামলা : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সংরক্ষিত এক নারী সদস্যের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই  নারী প্রার্থীর নাম সুফিয়া খাতুন। গতকাল বিকালে উপজেলা শহরের চিলমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজ মোড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনি চিলমারী থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। বরগুনায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য প্রার্থী এনামূল হোসেনের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও প্রার্থীর বড় ভাই পুলিশ কর্মকর্তা নাজমূলের বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রামে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ : চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে সরকারদলীয় হুইপ পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। শনিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের (পটিয়া) সদস্য প্রার্থী পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন ফরিদ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন অভিযোগ করেছেন।

রবিশালের ৩১ ভোটারকে আটকে রাখার অভিযোগ : নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল থেকে জানান, বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনের ৩১ জন ভোটারকে কুয়াকাটার একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার খালিদ হোসেন স্বপনের বিরুদ্ধে। জেলা পরিষদের ৩ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাতি প্রতীকের জাহাঙ্গীর হোসেন আকনের পক্ষে এক তরফা ভোট পাইয়ে দিতে সভাপতি অন্য পক্ষের ভোটারদের আটকে রেখেছন বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন।

জাহাঙ্গীরের প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক তালা প্রতীকের মাইনুল হোসেন পারভেজ মিলনের সমর্থক। তবে ওই ভোটাররা স্রেফ বিনোদন করতে কুয়াকাটা গিয়েছেন এবং ১৭ অক্টোবর সকালে বরিশাল এসে তারা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন হায়দার।

সর্বশেষ খবর