মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

আত্মস্বীকৃত সেই ডনরা ফের মাদক ব্যবসায়

♦ আত্মসমর্পণ করে জামিন ♦ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছেন কেউ কেউ ♦ মামলা চলছে ধীর গতিতে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ইয়াবা ডন শাহ আজম। দুই বছর পর জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হন আত্মস্বীকৃত এ মাদকসম্রাট। জামিনে মুক্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন শাহ আজম। শুধু আজম নন, আলোর পথে ফিরে আসতে ওই দিন আত্মসমর্পণ করা আত্মস্বীকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সিংহভাগই ফের জড়িয়ে পড়েছেন ইয়াবা ব্যবসায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ইয়াবাসহ গ্রেফতারও হয়েছেন। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার     মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৯ সালে আত্মসমর্পণকারী ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে পাঁচজন ফের ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছে। এ ছাড়া বাকিদের বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যারা ফের ইয়াবা ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘ওই সময় যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের কাউন্সেলিং করানো উচিত। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া জরুরি। তাই তাদের নিয়ে আমরা দ্রুতই বসব। তাদের কথাগুলো শুনব।’ মাদকনিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘কক্সবাজারের আত্মস্বীকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা জামিনে মুক্ত হয়েছেন তাদের আমরা নজরদারিতে রেখেছি। এর পরও আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ ফের মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ জানা যায়, প্রশাসন দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করলে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন ইয়াবা ডন টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এদের মধ্যে সাবেক এমপি বদির চার ভাইসহ আট স্বজন রয়েছেন। বছর দেড়েক পর মাদকবিরোধী অভিযান থমকে গেলে একে একে জামিনে বের হতে থাকেন ইয়াবাসম্রাটরা। জামিনে বের হয়ে ফের যুক্ত হন ইয়াবা ব্যবসায়। জামিনে মুক্ত হয়ে ফের ইয়াবা ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছেন এমন ইয়াবা ডনের মধ্যে অন্যতম টেকনাফের আবদুস শুক্কর, আমিনুর রহমান, নুরুল হুদা মেম্বার, সাহেদ রহমান নিপু, আবদুল আমিন, শফিকুল ইসলাম শফিক, ফয়সাল রহমান, শাহ আলম, আবদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, হামিদ হোসেন, মো. আলম, মো. আইয়ুব, মো রাসেল, নুরুল আমিন, আবু ছৈয়দ, মঞ্জুর আলী, রবিউল আলম, মো. ছিদ্দিক, জহুর আলম, হোসেন আলী ও শামসুল আলম ওরফে শামসু মেম্বার। টেকনাফের হ্নীলা এলাকার এক অধিবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের সময় ক্রসফায়ার শুরু হলে মৃত্যুর ভয়ে অনেকে আত্মসমর্পণ করেন। দেড়-দুই বছর তারা কারাগারে বন্দি ছিলেন। অভিযান থেমে গেলে জামিনে মুক্ত হয়ে একে একে বের হয়ে আসেন তারা। কয়েক মাস পর ফের ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন অনেকে। এখন তারা আগের চেয়ে বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ইয়াবা ব্যবসায়।

সেই মামলার গতি স্লথ : ২০১৯ সালে টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে সাড়ে ৩ লাখ পিস ইয়াবা, দেশে তৈরি ৩০টি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা ডন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ১০১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত। মারা যাওয়ায় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় রাসেলকে। চার্জ গঠনের পর হঠাৎ করে থমকে যায় এ মামলার কার্যক্রম। মামলায় সাক্ষীদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের প্রায় সবাই আদালতে থাকছেন অনুপস্থিত। তাই আড়াই বছরের বেশি সময়ে মাত্র ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পেরেছেন আদালত। মামলার সর্বশেষ তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর একাধিক সাক্ষী উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও সাড়া মেলেনি তাদের। এ মাসের শেষের দিকে মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। সাক্ষীদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সাড়া না পাওয়ায় আক্ষেপ করে কক্সবাজার জেলা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ‘এ মামলায় সাক্ষীদের যথাযথভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। যারা উপস্থিত হচ্ছেন তারাও আবার বৈরী আচরণ করছেন। ফলে মামলা গতি পাচ্ছে না। এ পর্যন্ত মাত্র ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের অনেক কৌশল করে আদালতে হাজির করা হয়েছে।’

 

সর্বশেষ খবর