মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নিজেকে নির্দোষ দাবি সদ্যবিদায়ী তথ্য সচিবের

মন্ত্রী বললেন কারণ জানি না

নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্য সচিব মো. মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর অন্তর্নিহিত কারণ জানা নেই বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আর অবসরে পাঠানো সচিব মকবুল হোসেন বলেছেন, এ রকম অবস্থার জন্য কখনো প্রস্তুত ছিলাম না। সারা জীবন নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে আপস করিনি। সরকার-বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রশ্নই ওঠে না।  গতকাল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিজ নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা এসব কথা বলেন। গত রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তথ্য সচিব মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কথা জানানো হয়। তাঁর চাকরির আরও বছর খানেক মেয়াদ ছিল। যখন এ খবর তথ্য মন্ত্রণালয়ে যায়, তখন মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় ছিলেন সচিব। তাঁর দফতরের একজন কর্মকর্তা সেই সভায় গিয়ে তাঁকে খবরটি জানান। এরপরই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে সচিবালয়ে। সরকারের দায়িত্বশীল কেউ এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। গতকাল সকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, গতকালকে (রবিবার) আমি দেখেছি, মন্ত্রণালয়ের এসে শুনেছি। অন্তর্নিহিত কী কারণ সেটা আমি জানি না। অন্তর্নিহিত কারণ বলতে পারবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আপনি তো অনেক দিন ধরে তার সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত বা সরকারবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন, আমি জানি না অন্তর্নিহিত কারণ। এটা আপনারা জনপ্রশাসনকে প্রশ্ন করতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘সচিব অবসর নিতে পারেন, সরকার তাকে আবার এক্সটেনশন দিতে পারে, দেয়। আবার সচিবের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে সচিবকে সরিয়ে দেয়, অবসরে দেয়, এগুলো আগেও ঘটেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ই এর ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবে।’ তিনি বলেন, এটি সরকারের মধ্যে অতীতেও ঘটেছে, বিভিন্ন সময়ে ঘটে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে কোনো সচিবই এক দেড় বছরের বেশি এখানে থাকেননি। আমার মন্ত্রণালয়ে কোনো সচিবই দীর্ঘদিন ছিলেন না। আগে অন্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলাম, সেখানেও তিন/চার জন্য সচিব ছিলেন আমার সঙ্গে।’

বলা হচ্ছে সচিব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, আপনি তাঁর ব্যাপারে বিরক্ত ছিলেন- এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ তো স্বাভাবিকভাবে চলছে। আমি প্রতিদিন মন্ত্রণালয়ে আসি। প্রতিদিন দু-ঘণ্টার জন্য হলেও আসি। কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর তা বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করি। মামলাগুলোও আমি তদারকি করি। মন্ত্রণালয়ের কাজ করার ক্ষেত্রে আমি যেহেতু তদারকি করি, যে কাউকে দিয়ে কাজ করাতে পারব।’

গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে নিজের দফতরে যান সদ্য বিদায়ী সচিব মকবুল হোসেন। তখন তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রজ্ঞাপনে অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকরের কথা থাকলেও কার্যত এটি গতকাল থেকেই কার্যকর হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগত কাগজপত্র রেখে গিয়েছিলেন, সেগুলো নিতে এসেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মকবুল হোসেন বলেন, এটি (অবসরে পাঠানো) সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকার যে কাউকেই এটি করতে পারে। এটা সরকারের অধিকার, স্বাভাবিক ঘটনা। এটা আগেও হয়েছে। চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে সরকার যে কাউকে অবসরে পাঠাতে পারে। একজন সরকারি কর্মচারীর জন্য এটি অবশ্যই শিরোধার্য। সরকারের আদেশ আনন্দের সঙ্গে মেনে নিয়েছি।

সরকারবিরোধী তৎপরতার অভিযোগ অস্বীকার করে মকবুল হোসেন বলেন, আপনারা সাংবাদিকেরা অনুসন্ধান করতে পারেন যে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তথ্য সচিবের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কি না। যদি থেকে থাকে, তাহলে সেটি আপনারা প্রচারও করতে পারেন। আমার পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নেই। আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলাম। আমার বাড়িতে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। আমার ভাই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বাকি জীবনেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে চলব।

একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের কথা উল্লেখ করে মকবুল হোসেন বলেন, ‘একটি পত্রিকায় লিখেছে, পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের বিপরীত পাশের একটি বেসরকারি অফিসে নাকি আমার যাতায়াত ছিল। আমি জানি না কোথায় অফিস আছে বা আমি কোনো অফিসে গিয়েছি কি না।’

আপনি লন্ডনে গিয়েছিলেন, সেখানে গিয়ে কারও সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে একটা কথা শোনা যাচ্ছে- এ বিষয়ে বিদায়ী সচিব বলেন, ‘আমরা লন্ডনে গিয়েছি গত মার্চ মাসে। আমরা একটা টিম নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের আশিকুন্নবী আছেন, আমাদের প্রেস। তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ হয়েছে বলা হচ্ছে- এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রবাদে আছে, হাতি যখন কাদায় পড়ে, চামচিকাও লাথি মারে। সেটা তো মার্চ মাসে হয়েছে। এখন সেই প্রশ্নটা আসে কী করে। আমি তারেক রহমানকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে হয় না। তারেক রহমানকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই।’

তিনি বলেন, ‘যদি প্রমাণ হয় বিএনপির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল আমি যেখানে থাকি আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। যে সারা জীবন একটাকে বিলং করল, যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, সে বিএনপির লোকের সঙ্গে কানেকশন রাখবে, এটা হয় না। এটা হতে পারে?’

আপনি কি মনে করতে পারছেন, কী কারণে এটি ঘটতে পারে? আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে অনিয়মের বিষয়টি আছে। আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ সরকারের কাছে ছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে নেই। আমি যত দিন এখানে কাজ করেছি, সততার সঙ্গে করেছি, নিষ্ঠার সঙ্গে করেছি, সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। আমার জানা নেই, আমার জ্ঞানের ভিতর নেই, আমার কোনো অপরাধ ছিল কি না বা কোন অপরাধের কারণে অবসরে দেওয়া হয়েছে, সেটি আমার জানা নেই। যেহেতু এটি সরকার পারে, আইনের ভিতরেই পারে সেজন্য এটি কার্যকর। আমি সরকারের প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল।’

শোনা যাচ্ছে, মন্ত্রীর সঙ্গে আপনার একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। আপনি অনেক কাজেই মন্ত্রীকে অবহিত করেননি, এ প্রসঙ্গে মকবুল বলেন, ‘মানুষ অনেক কথাই বলে। অনেক কিছুই শোনা যায়। শোনা কথা বিশ্বাস না করাই ভালো। আমার পক্ষ থেকে মন্ত্রীর সঙ্গে কেন দূরত্ব থাকবে? আমরা তো সবাই মিলেই কাজ করি। দূরত্বের কথা কেন আসছে আমি জানি না। আমি ওনাকে সম্মান করি। আমরা এখানে চেষ্টা করেছি, আমাদের অফিস টাইমের পরেও সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য, এ মন্ত্রণালয়ের মান-সম্মান-ইজ্জত বাড়ানোর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী ছিলাম। আমি এমন কোনো দিন নেই যে, দুই ঘণ্টা বেশি কাজ করিনি।’

বাধ্যতামূলক অবসর পাওয়া সচিব বলেন, যে কারণে এ সিদ্ধান্তটা নিয়েছে, নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। হয়তো রাষ্ট্রের কাছে যেটা আছে সেটা আমি জানি না।’ এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পথেঘাটে দেখা হবে। সচিবালয়ে দেখা হতে পারে। ভুল-অন্যায় হলে ভুলে যাবেন, ক্ষমা করবেন।

সর্বশেষ খবর