সুপ্রাচীন রাজনৈতিক দল ভারতে কংগ্রেসের নতুন সভাপতি হলেন রাজ্যসভা (সংসদের উচ্চকক্ষ) সদস্য মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি কেরালার তিরুবন্তপুরমের লোকসভা (সংসদের নিম্নকক্ষ) শশী থারুরকে হারিয়ে নির্বাচিত হলেন।
গত ১৭ অক্টোবর সভাপতি পদে নির্বাচন হয়। ভোটে অংশ নেন ৯৩৮৫ জন প্রতিনিধি। বুধবার ভোট গণনা করা হয়। দেখা যায়, খাড়গে পান ৭৮৯৭ ভোট, অন্যদিকে থারুর পান ১০৭২ ভোট। বাতিল হয় ৪১৬ ভোট।
নতুন সভাপতি নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। সব অভিযোগ খারিজ করে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কর্মকর্তা মধুসূদন মিস্ত্রি জানিয়ে দেন- ‘এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয়েছে।’ ২৪ বছর পর এবারই প্রথম ইন্দিরা গান্ধী পরিবারের বাইরে কোনো নেতা সভাপতি কংগ্রেসের নির্বাচিত হলেন। নতুন সভাপতি ৮০ বছর বয়সী খাড়গে, সোনিয়া গান্ধীর স্থলাভিষিক্ত হলেন। এই দলটির সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন সোনিয়া গান্ধী। ১৯৯৮ সাল থেকে কংগ্রেসের সভাপতির পদ সামলে আসছেন তিনি। কংগ্রেসের ১৩৭ বছরের ইতিহাসে এ নিয়ে ষষ্ঠবার সভাপতি নির্বাচন হলো। এর আগে ২০১৭ সালে সোনিয়াপুত্র রাহুল গান্ধী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরই সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন রাহুল। এরপর গত চার বছর দেশজুড়ে কংগ্রেসের দৈন্যদশা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। কার্যত দলটি অস্তিত্ব সংকটে ভোগে। এই নির্বাচনে অংশ নেননি গান্ধী পরিবারের কোনো সদস্য। তবে দুই দশক পর গান্ধী পরিবারের বাইরে কোনো প্রার্থী সভাপতি হলেও শেষ পর্যন্ত গান্ধীদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পরিচিত মল্লিকার্জুন খাড়গে দলের সভাপতি হলেন। ফল ঘোষণার পরই জয়ী প্রার্থী খাড়গেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শশী থারুর। টুইট করে খাড়গের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে টুইটে লেখেন ‘আমাদের দলের নতুন সভাপতিকে অভিনন্দন। তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করছি।’খাড়গে নির্বাচিত হওয়ার পরই দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরের বাইরে উৎসবে মেতে ওঠেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। অনেককেই দেখা যায় দোল খেলতে। কেউ আবার একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দেন। এদিকে ভারত জোড়ো যাত্রায় অংশ নিতে এই মুহূর্তে অন্ধ্রপ্রদেশে আছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। এদিন ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগে সংবাদ সম্মেলনে রাহুল বলেন, ‘দলে আমার ভূমিকা কী হবে তা নতুন সভাপতিই ঠিক করবেন।’ ১৯৪২ সালের ২১ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের দিদার এলাকায় মল্লিকার্জুন খাড়গের জন্ম। তিনি ১৯৬৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন। ২০২১ সালে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন। আইনে স্নাতক মল্লিকার্জুন খাড়গে তাঁর যৌবনকালেই একাধিক শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। পরে শ্রমিক সংগঠনের নেতাও হন তিনি।
১৯৭২ সালে কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং বিধায়ক নির্বাচিত হন মোট ১০ বার। ১৯৭৬ সালে রাজ্য শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী হন। এ ছাড়াও পঞ্চায়েত দফতর, গ্রাম উন্নয়ন, রাজস্ব আদায় একাধিক দফতরের মন্ত্রিত্বও করেন।