প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৌড় থেকে বরিস জনসনের সরে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয়সংখ্যক দলীয় এমপির সমর্থন না পাওয়ায় পেনি মরডন্ট ছিটকে পড়ায় ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ভারতীয় বংশোভূত ঋষি সুনাক।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এক টুইটবার্তায় ঋষি সুনাক লেখেন, ‘যুক্তরাজ্য একটি মহান দেশ। তবে আমরা গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি।’ সুনাক বলেন, ‘আমরা আমাদের অর্থনীতির পুনর্গঠন করতে পারব, আমাদের দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারব এবং দেশের জন্য কাজ করতে পারব। তবে যে ঝুঁকিগুলো আমাদের সামনে এসেছে তা করোনার সময়ের চাইতেও বেশ কঠিন। অন্যদিকে যে সুযোগগুলো আমাদের সামনে আছে, যদি সেগুলো আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি তবে তা হবে বিস্ময়কর।’ ২০১৯ সালের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সুনাক বলেন, সরকার পরিচালনায় তার সততা, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতা বজায় থাকবে। উল্লেখ্য, এর আগে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে জনসন জানান, ‘এটা করা ঠিক হবে না’ বলে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ২টার মধ্যে প্রার্থীরা ১০০ জন কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতার সমর্থন নিশ্চিত করতে না পারায় ঋষির আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী পেনি মরডন্ট দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনাকের নাম নিশ্চিত হয়। এভাবেই বহুজাতিক ও বহুমাত্রিক ব্রিটেনে ৩০১ বছর পর প্রথম অশ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী হয়ে ঋষি সুনাক ইতিহাস গড়লেন। ব্রিটেনের রাজনীতিতে কয়েক বছর ধরেই সক্রিয় ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই রাজনীতিবিদ। সাউদাম্পটনে থাকত তাঁর পরিবার। ১৯৮০ সালের ১২ মে সেখানেই ঋষির জন্ম। আফ্রিকান হিন্দু পাঞ্জাবি পরিবারে বেড়ে ওঠা তাঁর। হ্যাম্পশায়ার ও উইনচেস্টার কলেজে স্কুলজীবন শেষে অক্সফোর্ডের লিংকন কলেজ থেকে ২০০১ সালে স্নাতক হন তিনি। পরে ২০০৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ নিয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানেই স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। ২০০৯ সালে বেঙ্গালুরুতে অক্ষতার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ঋষি। ২০১৪ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন ঋষি। সে বছর রিচমন্ড থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন। ব্রিটেনের ধনীদের মধ্যে অন্যতম ঋষি। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ জানলে চোখ কপালে উঠবে! ঋষি ও তাঁর স্ত্রী অক্ষতার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৭৩০ মিলিয়ন পাউন্ড। বাংলাদশের মুদ্রায় যা ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। মধ্য লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে ঋষির। একাধিক সুযোগসুবিধা রয়েছে সেই বাড়িতে। জানা গেছে, সুনাকের বাড়িতে রয়েছে পাঁচটি বেডরুম। এ ছাড়াও রয়েছে চারটি বাথরুম। রয়েছে বিশাল বাগানও। ঋষির এই বিলাসবহুল বাড়ির দামও আকাশছোঁয়া। যে বাড়িটি প্রায় ৪৫ কোটি টাকা দামে কিনেছিলেন ঋষি-অক্ষতা। বর্তমানে এই বাড়ির দাম ৭০ কোটি টাকারও বেশি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির কাছেই রয়েছে সুনাকের বাড়ি। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বাড়িটি নবরূপে সাজানো হয়েছিল। শোনা যায়, স্ত্রীর মনের মতো করেই সাজানো হয়েছে বাড়িটি। লন্ডনের ওল্ড ব্রম্পটন রোডে দক্ষিণ কেনসিংটনে আরও একটি বাড়ি রয়েছে ঋষির। বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে এই বাড়িতে যান ঋষি ও অক্ষতা। এ ছাড়াও নর্থ ইয়র্কশায়ারে ঋষির খামারবাড়িও রয়েছে। এই বাড়িটিও অত্যন্ত বিলাসবহুল।