ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে ঝড়-বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীতে জলাবদ্ধতা, পরিবহন সংকটসহ নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। সারা দেশ থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, সিত্রাংয়ের প্রভাবে বিভিন্ন জেলার মানুষকেও দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। অতিমাত্রায় ঝড়-বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে জনজীবন। গতকাল ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। রাজধানীর গ্রীনরোড, মোহাম্মদপুর, পশ্চিম রাজাবাজার, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, ইন্দিরারোড, মগবাজার ফ্লাইওভার, শ্যামলী, মিরপুরের বেগম রোকেয়া সরণি, রাজারবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিলসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করতে দেখা গেছে। গতকাল দুপুরে গ্রীনরোডে হাঁটু পানি জমে থাকতে দেখা যায়। রিকশাসহ অন্য গড়িগুলো পানি ছিটিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। আনোয়ার হোসেন নামের এ এলাকার এক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, সকাল থেকে যানবাহনের সংখ্যা কম। এদিকে জলাবদ্ধতার মধ্যে গণপরিবহন না পেয়ে আরও ভোগান্তিতে পড়েন নাগরিকরা। এ সুযোগে সিএনজি ও রিকশা ভাড়া বাড়িয়ে দেন চালকরা। দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। শাহবাগ থেকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে সিএনজি করে আসেন শাকিলা আক্তার। তিনি জানান, অন্য সময় বাসে এলে ১০ থেকে ১৫ টাকা খরচ হয়। সিএনজি ভাড়াও ১৫০ টাকার বেশি নেয় না। কিন্তু গতকাল সকাল ৯টার দিকে কোনো বাস পাননি। সিএনজি নিতে গেলে ৩৫০ টাকা ভাড়া হাঁকান চালক। শেষমেশ ২৭০ টাকা দিয়ে আসেন তিনি। উত্তরা এলাকার আজহারুল ইসলাম জানান, সকালে ব্যবসায়িক কাজে গুলিস্তান যান। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে একটি বাসে ওঠেন। কিন্তু বাসের জানলার কাচ ভাঙা থাকার কারণে তিনিসহ অনেক যাত্রীই ভিজে গেছেন। রাজাবাজার থেকে বাংলামোটর ৫০ টাকা রিকশা ভাড়া হলেও গতকাল ১০০ থেকে ১২০ টাকা টাকা নিয়েছেন রিকশা চালকরা। হাতিরঝিল থেকে কারওয়ান বাজার ২০ টাকা ভাড়া হলেও ৫০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। কারওয়ান বাজার থেকে সাতরাস্তা পর্যন্তও ৩০ টাকার ভাড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন জেলার ঝড়-বৃষ্টির খবর : উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনায় সিত্রাং আঘাত হেনেছে গতকাল রাত থেকেই। এ ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঝড়-বৃষ্টির তথ্য পাওয়া গেছে নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে।
পিরোজপুর : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে পিরোজপুরে শুরু হয়েছে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি। পানি বৃদ্ধি না পেলেও জেলার ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় গাছ উপড়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল থেকে পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে এ তথ্য পাওয়া যায়।নোয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে নোয়াখালীর উপকূলীয় তিন উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জে অন্তত ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আসছেন মানুষ। গতকাল ভোর থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্যোগব্যবস্থাপনা কমিটি জরুরি সভা করেছে। রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপির প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ার ইতোমধ্যে উপকূল অঞ্চলে মাইকিং করছে।
ফেনী : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। সোনাগাজীর উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়া বইছে। বৃষ্টি ও ঝড়ো হওয়ার ফলে ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাঠের ধান। উপজেলার জেলেপাড়া, আদর্শ গ্রাম, মুহুরী প্রজেক্ট, ধান গবেষণা ও সোনাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মাঠের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে ফেনী জেলা প্রশাসন।
বান্দারবান : সিত্রাংয়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত বান্দরবানে মাঝারি বাতাস ও হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জেলা দুর্যোগব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভা গতকাল বিকালে কালেক্টরেট সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক লুৎফুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।
বগুড়া : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বগুড়ায় হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টা থেকে এ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বৃষ্টিপাতের কারণে শহরজুড়ে পানিজমে যানজটের পাশাপাশি ভোগান্তি বাড়ে পথচারীদের।
পাবনা : ঘূর্ণিঝড় ?সিত্রাংয়ের প্রভাবে পাবনায় রবিবার দিবাগত রাত থেকে টানা বর্ষণ চলছে। সেই সঙ্গে বইছে ঝড়ো বাতাস। পাবনার নদ-নদীগুলোতেও পানি বেড়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে বন্ধ রাখা হয়েছে নৌপথে চলাচলকারী সব নৌযান। রবিবার মধ্যরাত থেকে টানা বৃষ্টিতে পাবনা শহরের নিম্নাঞ্চলের অলিগলি ডুবে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না।
ঝিনাইদহ : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝিনাইদহে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। রবিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। গভীর রাতে কিছুটা কমলেও সকাল থেকে আকাশে মেঘ জমতে থাকে। এরপর শুরু হয় টানা বৃষ্টি। সকাল থেকেই সূর্যের দেখা মেলেনি। এতে করে কমেছে দিনের তাপমাত্রা। টানা বৃষ্টি হওয়ায় সড়ক, মহাসড়কে মানুষের চলাচল কমেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে যারা বের হচ্ছেন তাদের ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে।