বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

খোলা আকাশের নিচে শত শত পরিবার

বরিশালের অলিগলিতে এখনো পানি

প্রতিদিন ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ৩৬ ঘণ্টা পরেও উপকূলীয় অঞ্চলে বাড়িঘর হারানো শত শত পরিবারকে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। জনপদের অনেক স্থান এখনো ডুবে থাকায় সেখানে যেতে পারছে না বহু পরিবার।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খুলনার কয়রা-পাইকগাছা উপকূলের দুর্বল বেড়িবাঁধ। ল-ভ- হয়ে গেছে ভোলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকায় বহু বসতি ও দোকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব এলাকার শত শত পরিবার এখনো থাকার জায়গা না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। ভেসে গেছে ঘেরের মাছ। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন লাখো গ্রাহক। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় সব মিলিয়ে আনুমানিক ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সরকারিভাবে বলা হয়েছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ল-ভ- ভোলা উপকূলের সাত উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি দোকানপাট গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটেও অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ১ হাজার ২০০ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা পড়ে ও ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ২০০ কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট এলাকার কয়ের হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। বিদ্যুৎহীন রয়েছে জেলার অধিকাংশ এলাকা। বাগেরহাটের বেমরতা, বেটপুর, ফতেপুর, ভাটসালা এলাকায় ঝড়ে অসংখ্য গাছ পড়ে গেছে। গতকাল যে যার মতো করে ঘরের ওপর পড়ে থাকা এসব গাছ কেটে অপসারণ করছিলেন। অনেক বাড়ির উঠান পর্যন্ত হাঁটুপানি জমে রয়েছে। ছিল না বিদ্যুৎ। এদিকে টানা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে বরিশাল নগরীর অন্তত অর্ধশত এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পটুয়াখালীর জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে পাঁচ উপজেলায় এখনো বিদ্যুৎ সরবরাবহ স্বাভাবিক হয়নি। বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও সেন্টমার্টিনে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে গতকাল পাঠানো আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর-

বরিশাল : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং কেটে গেছে, নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। কিন্তু বরিশাল নগরীর পানি কমছে না। গতকালও বিভিন্ন সড়ক এবং অলিগলি ছিল পানির নিচে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, নদীর পানি কমলে সড়কের পানি নেমে যাবে।  অভিযোগ অনুযায়ী, বরিশাল নগরীর বটতলা সড়ক, বগুড়া রোড, আমীর কুটির, সুলতান কুটির, আমতলা সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক এবং অলিগলি পানিতে তলিয়ে আছে। ওইসব সড়কে চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জনসাধারণ। তাদের অভিযোগ, খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ এবং ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় আটকে পড়া পানি নামছে না। এ জন্য কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্ত এবং অবহেলাকে দুষছেন তারা। ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা দাবি করছেন তারা। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম জানান, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবারের চেয়ে গতকাল অনেক নদীর পানি কমেছে। কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তেঁতুলিয়া, মেঘনা, সুরমা, বিষখালী, বুড়িশ্বর, পায়রা, বলেশ্বর এবং কচা নদীর পানি কিছুটা কমার পরও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভোলা : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের দুটি পল্টুনই বিধ্বস্ত হয়েছিল। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে ফেরি চলাচল। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়ে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের চালক শ্রমিকদের এখনো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গতকাল সকালে একটি পল্টুন মেরামত হওয়ায় কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিল যানচলাচল। তবে দুপুরের পরে জোয়ারের পানিতে পল্টুনটি ডুবে আবারও ফেরি চলচাল বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে হাই ওয়াটার ঘাটটি বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই রুটের চলাচলকারী যানবাহন চালক, শ্রমিক ও যাত্রী।

চরফ্যাশন (ভোলা) : গতকাল সকালে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ফাহিম ব্রিকস সংলগ্ন এলাকা থেকে চরফ্যাশন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মো. আওলাদ হোসেন (১৮) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে। আওলাদ হোসেন শশীভূষণ থানা সংলগ্ন এওয়াজপুর ইউনিয়ন ১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইমাম হোসেনের ছেলে। এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, সকালে জাল নিয়ে মায়া নদীতে মাছ শিকার করতে যায় আওলাদ। মাছ ধরা অবস্থায় নদীতে জাল ফেলতে গেলে একপর্যায়ে ওপর থেকে নদীর তীরের মাটি ভেঙে আওলাদের গায়ে পড়লে সে পা পিচ্ছলে নদীতে পড়ে যায়। পরে জালের সঙ্গে আওলাদের শরীর পেঁচিয়ে যায়। এতে নদীতেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে সিত্রাংয়ের তান্ডবে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে কাঁচা পাকা আমন ধান। তিন দিন পর বিভিন্ন দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সোমবারের ঘূর্ণিঝড়ে চরফ্যাশন উপজেলা প্রায় ৪ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রোপা আমন এবং সবজির। ঝড়ো হাওয়া, জোয়ার এবং অতিপ্লাবনে জেলার ১৫ উপজেলার রোপা আমন ধান ও সবজি তলিয়ে গেছে পানিতে। এতে করে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলার ১৫টি উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমির আমন ফসল তলিয়ে গেছে। ভারী বর্ষণ ও দমকা হওয়ায় শত শত হেক্টর জমির ফসল জমিতে হেলে পড়েছে। একই সঙ্গে ৩৬৪ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি ক্ষতি হয়েছে। আমন ফসলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঁশখালী উপজেলায়। এ উপজেলায় ১ হাজার ৪৮২  হেক্টর আমনের মধ্যে ৮০০ হেক্টর ক্ষতি হয়েছে। এরপরই রয়েছে সীতাকুন্ড উপজেলা। আনোয়ারায় শঙ্খ নদের উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণে মাঠে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

সর্বশেষ খবর