বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়

জ্বালানি সংকট দ্রুত নিরসনের আশ্বাস উপদেষ্টা-প্রতিমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড সোজা রাখতে শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট দ্রুত নিরসনের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। শিগগিরই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে বসে সমাধানের পথ বের করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

গতকাল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সম্মেলন কক্ষে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ আশ্বাস দেন সরকারের এই দুই নীতিনির্ধারক। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের আহ্বানে আপনারা শিল্পকারখানা স্থাপন করেছেন। কারখানা চালাতে আপনারা গ্যাস-বিদ্যুৎ চাইছেন। এটা স্বাভাবিক। বৈশ্বিক সংকটের কারণে আজ আমাদের সমস্যা হচ্ছে। শিল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে শিল্পকারখানাগুলো যদি বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থাকত, তাহলে বিষয়টা সহজ হতো। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন- এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বাংলাদেশ ইকনোমিক জোন ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাফওয়ান সোবহান, বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান, তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন- বিজিএমইএ-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ নিটওয়্যার উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন- বিকেএমইএ-এর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বাংলাদেশ অটো রিরোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি ইমরান করিম, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সহ-সভাপতি মো. শহিদুল্লাহসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীরা গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে শিল্পোৎপাদনে সমস্যা ও লোকসানের চিত্র তুলে ধরে বলেন, জ্বালানি সংকটে দিনের বড় একটা সময় কারখানা চলছে না। কিছু শিল্পে একবার লোডশেডিং হলে সব কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। এতে শুধু লোকসানই নয়, রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা আসবে। বাজার হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। অথচ, এক বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি কিনলে রপ্তানির মাধ্যমে ৩-৪ বিলিয়ন ডলার উপার্জন সম্ভব। এতে দেশের রিজার্ভ বাড়বে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত পোষণ করে নসরুল হামিদ বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ও স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বাড়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। বাড়তি দামে এলএনজি কেনা বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। এক বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি সরবরাহ করতে পারলে যদি চার বিলিয়ন ডলার রপ্তানি থেকে আসে, তাহলে টাকা আটকে রেখে লাভ কি? এ ব্যাপারে উপদেষ্টা মহোদয় ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে তিনি গভর্নরের সঙ্গে বসবেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটের জন্য ৩০ টাকা খরচ হচ্ছে। ফার্নেস অয়েল দিয়ে উৎপাদনে লাগত ১৭ টাকা। বাড়তি টাকা দিয়ে গ্যাস আনতে পারি। কিন্তু ডিজেল আমদানি করে বিপিসি। ফার্নেস অয়েল আনার জন্য আমরা বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতকে টাকা দিচ্ছি। ১৭ হাজার কোটি টাকা তারা পায়। তাদের আমরা টাকা দিচ্ছি না। তারাও ফার্নেস অয়েল আনছে না।

সালমান এফ রহমান বলেন, রিজার্ভের কারণে আমরা জ্বালানি আমদানি করছি না এটা ঠিক নয়। সমস্যাটা হচ্ছে দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য কয়েক গুণ বেড়েছে। এই দামে আমদানি করলে দামও বাড়াতে হবে। ভবিষ্যতে আমদানি করব কি না, কতটুকু করব সেটা দামের ওপর নির্ভর করছে। কিছুদিন আগে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম কমে গিয়েছিল। দুই তিন দিনের মধ্যে আবার বেড়ে গেছে। কিছুদিন দেখতে হবে। এরপর বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, কভিড পরিস্থিতি আমাদের পরিকল্পনা মতো  এগোতে দেয়নি। শিল্প-কারখানায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

সর্বশেষ খবর