শুধু শেষ ওভার নয়, বিধাতা বোধহয় শেষ বলের জন্য আলাদা করে স্ক্রিপ্ট লিখে রেখেছিলেন। না হলে এক ওভারে এত রং! এক ম্যাচে এত উত্তেজনা, এত রোমাঞ্চ! তার ওপর দু-দুবার জয়! ভাবাই যায় না। এমনটি কখনো দেখেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, ম্যাচসেরা তাসকিন আহমেদ। দেখেননি পরাজিত দলের সেরা পারফরমার শন উইলিয়ামসনও। অবিশ্বাস্য এক চিত্রকল্পের ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছে ৩ রানে। এর চেয়ে কম রানে জয়ের রেকর্ড রয়েছে টাইগারদের। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল ১ রানে। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ রানের জয়টি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা। হিমালয়সম চাপ সামাল দিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের জাদুকরি ওভারে স্বপ্নের এক জয় তুলে নেন সাকিব, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাসকিন, আফিফ, মুস্তাফিজরা। দুর্দান্ত, দুরন্ত, অবিশ্বাস্য এক জয়ে বাংলাদেশ টি-২০ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের গ্রুপ-২’র সেমিফাইনালের লড়াইয়ে টিকে রয়েছে। সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৯ রানে নেদারল্যান্ডসকে হারায়। দ্বিতীয় ম্যাচে চরমভাবে ব্যর্থ টাইগাররা ১০৫ রানে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। সেই ধাক্কা সামলে ব্রিসবেনে ৩ রানের ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় সাকিব বাহিনী। টাইগারদের পরের দুই ম্যাচ ২ ও ৬ নভেম্বর অ্যাডিলেডে যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে।
শেষ ওভারের প্রতিটি বলেই ছিল চরম নাটকীয়তা। জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ১৬ রান। টাইগার অধিনায়ক বল তুলে দেন অফ স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের হাতে। প্রথম বলে রায়ান বার্ল লেগ বাইয়ে ক্রিজ পরিবর্তন করেন। দ্বিতীয় বলে ডিপ মিড উইকেটে ইভান্স তালুবন্দী হন আফিফের। ৪ বলে দরকার ১৫ রান। ম্যাচ হেলে পড়ে সাকিবদের দিকে। তৃতীয় বলে লেগ বাইয়ে ৪। ৩ বলে ১১ রান। ম্যাচে ফেরে জিম্বাবুয়ে। চতুর্থ বলে এনগারাভা ডিপ ফাইন লেগে অবিশ্বাস্য এক ছক্কা মেরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেদের করে নেন। ২ বলে ৫ রান। সহজ টার্গেট। পঞ্চম বলে নুরুল হাসান সোহান ক্ষিপ্তগতিতে স্ট্যাম্পিং করেন এনগারাভাকে। জমে উঠে ম্যাচ। ১ বলে দরকার ৫। জিম্বাবুয়ে জিততে চায় ছক্কা মেরে। বাংলাদেশকে জিততে সর্বোচ্চ ৩ রান দিলেই হবে! এমন সমীকরণে মোসাদ্দেকের বলে ব্লেসিং মুজারাবানি স্ট্যাম্পিং হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ৪ রানের জয় নিশ্চিত করে মাঠ থেকে উঠে যান দুই দলের খেলোয়াড়রা। কিন্তু মাঠে রয়ে যান আম্পায়ারদ্বয়। অপেক্ষায় থাকেন টিভি রিপ্লের। রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গেছে বল স্ট্যাম্প পেরুনোর আগেই সোহান বল স্ট্যাম্পিং করেন। যা আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ‘নো’ বল। ফলে নতুন করে ক্রিকেটাররা মাঠে ফেরেন। শেষ বলের সমীকরণ দাঁড়ায় ৪ রান। মোসাদ্দেকের আর্মারে রান নিতে ব্যর্থ হন মুঝারাবানি। ৩ রানের অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
ব্রিসেবেনে ঐতিহাসিক জয়ে অনেকগুলো ইতিহাস লিখল সাকিব বাহিনী। শতাধিক বছরের পুরনো স্টেডিয়ামটিতে প্রথমবার খেলতে নেমে জয়ের মধুর আস্বাদ নিল টাইগাররা। ব্রিসবেনে টি-২০ বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচটিও জয়ে রাঙালেন সাকিবরা। ২৫ বছর ধরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলছে। অথচ এই প্রথম যে কোনো ফরম্যাটের বিশ্বকাপে আফ্রিকান দেশটির বিপক্ষে খেলেছে। জমাটি এক জয়ে টাইগাররা চিরস্মরণীয় করে রাখল ক্রিকেট মহাযজ্ঞে দুই দলের প্রথম মুখোমুখি। সব মিলিয়ে দুই দলের ২০ মুখোমুখিতে ১৩ বার সাফল্যের হাসি হেসেছে টাইগাররা।ব্রিসবেনের হার্ড ও বাউন্সি উইকেটে টস জিতে বাটিং করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫০ রান করে বাংলাদেশ। এই প্রথম ‘টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট’ শ্রীধরন শ্রীরামের ইমপেক্ট ও ইনটেন্ট ক্রিকেট খেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫৫ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায় ৭১ রান করেন। ব্যর্থ হয়েছেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার। লিটন দাস ১২ বলে ১৪, সাকিব ২০ বলে ২৩ ও আফিফ ২৯ রান করেন ১৯ বলে। ১৫১ রানের টার্গেটে টাইগার পেসার তাসকিন, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজ ও স্পিনার মোসাদ্দেকের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৮ উইকেটে ১৪৭ রান করে জিম্বাবুয়ে।