প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে যেমন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর অবদান রয়েছে, আমাদের জাতীয় জীবনেও অবদান রয়েছে তাঁর। জিয়াউর রহমান আইন করেছিল পার্টির রেজিস্ট্রেশনে কারও নাম দেওয়া যাবে না। কিন্তু এ ব্যাপারে সাজেদা চৌধুরী অটল ছিলেন। তিনি বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু ছাড়া পার্টি হয় না। আমাদের দলের মধ্যেও কারও কারও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে অটল ছিলেন সাজেদা চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল জিয়াউর রহমান, তাই এই আইন করেছিল।
জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনের প্রথম দিনে গতকাল প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও শেখ এ্যানি রহমানের ওপর শোক প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, জেনারেল এরশাদ সবাই আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন করেছে। সাজেদা চৌধুরীর মতো অসংখ্য নিবেদিত নেতা-কর্মী এই সংগঠনের হাল ধরে ছিল বলেই চরম দুঃসময়েও এই সংগঠন কখনো দিক হারায়নি। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী। সাজেদা চৌধুরী বা মতিয়া চৌধুরীকে গ্রেফতার করে জিয়াউর রহমান ডিভিশন না দিয়ে ফেলে রেখেছে। ঠিক খালেদা জিয়া একই কাজ করেছিল। তিনি বলেন, সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগে যে অবদান রেখে গেছেন তা ভোলার নয়। চরম দুর্দিনে আওয়ামী লীগের হাল ধরা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন। সংসদ নেতা বলেন, আমি দেশে আসার পর তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সব কাজ তিনি সুচারুরূপে করতেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তাকে বন ও পরিবেশমন্ত্রী বানিয়েছিলাম। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হয়েছে। এর অবদান সাজেদা চৌধুরীর।সংসদ নেতা বলেন, ছাত্র রাজনীতি যখন করতাম তখন থেকেই তাকে চিনতাম। তিনি বেশি বয়সে লেখাপড়া করেন। তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা। তাকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিত প্রাণ নেতাকে হারাল। তিনি চলে যাওয়াতে শুধু আওয়ামী লীগের নয়, দেশেরও ক্ষতি হয়েছে। আলোচনায় আরও অংশ নেন, আমির হোসেন আমু, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, আ স ম ফিরোজ, বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা, আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও ওয়াসিকা আয়শা খান।
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিটি বাহিনীকে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিটি বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তুলছে।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এভিয়েশন বহরে দুটি মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট এমপিএ-৮৩২২ ও এমপিএ-৮৩২৭ সংযোজন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা নেভাল এভিয়েশন হ্যাঙ্গারের সঙ্গে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। তিনি নৌবাহিনীর নতুন এই অভিযাত্রাতে আনন্দ প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রীকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। কিন্তু করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের উন্নয়নের গতিটা কিছুটা শ্লথ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী উন্নত দেশগুলোও এখন হিমশিম খাচ্ছে। সেই অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। তবে আমরা আমাদের নিজেদের সম্পদ এবং মাটি ও মানুষ দিয়েই এই দেশকে সুরক্ষিত রাখব, যার যেখানে যতটুকু সুযোগ আছে আমাদের খাদ্য উৎপানে মনেযোগী হতে হবে। তিনি বলেন, দেশে ব্লু-ইকোনমি কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের নিরাপত্তা ও নজরদারিতে নৌবাহিনীর এমপিএসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৭ সালে নৌবহরে ‘বানৌজা নবযাত্রা’ ও ‘বানৌজা জয়যাত্রা’ সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি সত্যিকারের পূর্ণাঙ্গ ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই দুটি নতুন এমপিএ সংযোজনের মাধ্যমে নেভাল এভিয়েশনের সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং স্বল্প সময়ে দ্রুততার সঙ্গে সুবিশাল সমুদ্রসীমা টহল প্রদান করা আরও সহজতর হবে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমেই আমাদের নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে নৌবাহিনীর সাহসী সদস্যদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিচালিত ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি একে নৌযুদ্ধের ইতিহাসের ‘এক অনন্য বীরত্বগাথা’ বলেও উল্লেখ করেন। পাশাপাশি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতার উদ্যোগের পাশাপাশি নৌবাহিনী পুনর্গঠন এবং বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণে তাঁর প্রশংসনীয় পদক্ষেপ সমূহের উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ঘোষণা করেছিলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করা হবে।’ তারই ধারাবাহিকতায় আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নৌবাহিনীকে আধুনিক, দক্ষ ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, নৌবহরে যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি, অপারেশনাল এভিয়েশন উইং গঠনসহ বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করি। শেখ হাসিনা বলেন, সাবমেরিন ও অন্যান্য যুদ্ধ জাহাজসমূহকে পোতাশ্রয়ে নিরাপদ জেটি সুবিধা প্রদানে কক্সবাজারের পেকুয়াতে আধুনিক বেসিন সুবিধা সংবলিত স্থায়ী সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও এভিয়েশন সক্ষমতাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে উপকূলবর্তী এলাকায় নৌবাহিনীর জাহাজসমূহের অপারেশনাল ও প্রশিক্ষণ সুবিধাসহ ‘বানৌজা শেরেবাংলা ঘাঁটি’র নির্মাণ কাজও অনেক দূর এগিয়েছে।