সারা দেশে বিএনপি-জামায়াত এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সন্ত্রাস- নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জোনভিত্তিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল গুলশান জোনের উদ্যোগে মধ্যবাড্ডা থেকে এই মিছিল করা হয়।
বিকাল ৩টা থেকে মিছিলটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে বেলা সাড়ে ১২টা থেকেই সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। ঘড়ির কাঁটা বেলা ৩টা বাজার আগেই রাজধানীর আফতাবনগর, মেরুল বাড্ডা, মধ্যবাড্ডা ও নতুন বাজারসহ পুরো এলাকায় দেখা যায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট থেকে আগত লক্ষাধিক নেতা-কর্মীর ঢল। মধ্যবাড্ডার প্রধান সড়কে খোলা ট্রাকে দক্ষিণমুখী করে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। মঞ্চের সামনে ও পেছনে আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতা-কর্মী। মঞ্চ থেকে যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ।
গতকাল বরিশালে বিএনপি গণসমাবেশ করে। পাল্টা সমাবেশের কথা না বললেও রাজধানীতে স্মরণকালের জনস্রোত নামিয়ে বরিশালের বিএনপির গণসমাবেশের পাল্টা জবাব দিল আওয়ামী লীগ। সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ারি দেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি অশান্তি করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এখন ছাড় দেওয়া হলেও বিজয়ের মাস ডিসেম্বর থেকে বিএনপিকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। তত্ত্বাবধায়ক ভূত মাথা থেকে নামান। এটি সর্বোচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করেছেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লোক ভাড়া করে সমাবেশ করে আমাদের ভয় দেখান? এখন ছাড় দিচ্ছি। ডিসেম্বরে ছেড়ে দেব না। তিনি বলেন, আমি এইমাত্র কুমিল্লা থেকে আসলাম। কুমিল্লা মহানগর সম্মেলনে বিশাল জমায়েত। ভিতরে, বাইরে আরও তিন গুণ লোক। আজকে কুমিল্লায় যা দেখলাম ঢাকায় এসে দেখছি একটা বিশাল জনস্রোত। এখানে এসে বরিশালের কথা ভাবছি। ফখরুল সাহেব ছয় জেলার লোক টাকা-পয়সা দিয়ে চার দিন আগে থেকে বরিশালে এনেছেন। আর এখানে ছয় থানার লোক। বিএনপিকে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা নাকি ডিসেম্বর মাসে আমাদের হটিয়ে, শেখ হাসিনাকে হটিয়ে খালেদা জিয়াকে নিয়ে খোমেনি স্টাইলে বিপ্লব করবেন ঢাকার রাজপথে। জনতার শক্তির সামনে এই রঙিন খোয়াব কর্পূরের মতো উবে যাবে।বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা ভুলে যান। নির্বাচন করে আসতে হবে। তত্ত্বাবধায়কের ভূত মাথা থেকে নামান। এটি সর্বোচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের কোনো দোষ নেই। তত্ত্বাবধায়ক আর আসবে না। ওইটা জাদুঘরে চলে গেছে। খেলা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোকাবিলা হবে। আন্দোলনে হবে। নির্বাচনে হবে। খেলা হবে ভোট চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। খেলা হবে খুনিদের বিরুদ্ধে, ১৫ আগস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে। খেলা হবে ২১ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড বিএনপির বিরুদ্ধে।
জনস্রোতের কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই মিছিলের মাথা কোথায় জানি না। দেখছি আর দেখছি। আমার পেছনে আমেরিকান দূতাবাস পর্যন্ত, লোক আর লোক। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। কিন্তু বিদেশিরাই এখানে থাকে। তারা দেখুক, কার কত শক্তি।
সমাবেশে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, এ দেশের আর একটি মানুষের ওপর আঘাত করলে-একশ মানুষের আঘাত নেওয়ার জন্য আপনাদের (বিএনপির) প্রস্তুত থাকতে হবে। যতই ষড়যন্ত্র-বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন আমরা তা সফল হতে দেব না। তিনি বলেন, এ দেশে অগ্নিসংযোগ করেছেন, বাসে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন, দেশে লুটপাট করেছেন আপনারা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগ করার অপরাধে মানুষের হাত-পা কেটেছেন, বাড়িঘরে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। এ দেশের মানুষ বিএনপির এই অপরাজনীতিগুলো এখনো ভুলে যায়নি।
আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। জনগণকে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গত ১৪ বছর দেশ পরিচালনা করছে। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে। তা বিএনপির ভালো লাগে না। তাই ভালো লাগার ওষুধ দিয়ে তাদের ভালো লাগাতে হবে। ডিসেম্বরের ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সমাবেশের নামে তারা যদি আবার কোনো উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় তাহলে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ওই কেরানীগঞ্জের কারাগারে আমরা দেখব। সেটাই হলো বিএনপি নেত্রীর যথাযথ স্থান। দেশ থেকে পালানো তারেক রহমানের নির্দেশে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় ঢাকাবাসী তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করবে। এ বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে বলেই বিএনপি সমাবেশ করতে পারছে। কিন্তু সভা-সমাবেশের নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজপথেই প্রতিহত করবে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, সহসভাপতি ওয়াকিল উদ্দিন, আবদুল কাদের খান, বশির আহমেদ, সাবেক এমপি জাহানার বেগম প্রমুখ।