চার মাস আগে নব কিশলয় গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে টানা পাঁচ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে স্থানীয় সিটি শাহীন গ্রুপের সদস্যরা। প্রথমে চনপাড়া ৭ নম্বর ব্লকের শাহীনের (বৃহস্পতিবার র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত) দখল করা এক তলা বাড়িতে তাকে রাখা হয়। পরে ৯ নম্বর ব্লকের ডন আরিফের ডেরায় রাখা হয় তিন দিন। সব শেষ ডন আরিফের ভাগনের বাড়িতে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন করা হয় মেয়েটিকে। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মেয়েটির পরিবারকে থানায় পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়নি। ঘটনার বিচার চেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য বজলুর রহমানের কাছে যান ধর্ষিতার পরিবারের সদস্যরা। তখন তার উত্তর ছিল, ‘চামড়ার সঙ্গে চামড়া লাগছে। এতে কী হইছে!’ এর পর থেকে ওই ছাত্রী ভয়ে আর স্কুলমুখী হয়নি। ভয়ে স্কুলে যাওয়া বাদ দিয়েছে ধর্ষিতার এক বান্ধবীও।
শুক্রবার দুপুরে রূপগঞ্জে গা শিউরে ওঠা নারকীয় এ ঘটনার বিষয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ধর্ষিতা ছাত্রীটির বড় বোনের। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন তিনি। বলেন, ‘আমরা বড়ই অসহায়। এই চনপাড়া বস্তিতে বজলুর কথাই আইন। তার ইশারা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। চনপাড়ার সবাই তার কাছে জিম্মি। প্রকাশ্যে অস্ত্র ও গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করেন সন্ত্রাসী বজলু। চনপাড়ার মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা বজলু নিয়ন্ত্রণ করেন না। চনপাড়া ও আশপাশ এলাকায় বজলুর কথাই চূড়ান্ত। তার বিরুদ্ধে ‘টুঁ’শব্দ করার মতো সাহস কারও নেই।’
শুক্রবার ও গতকাল এই প্রতিবেদক যান সরেজমিন চনপাড়া গ্রামে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন চনপাড়ার তিন দিকে নদী, একদিকে খাল। ডেমরা হয়ে বালু নদের ওপর নির্মিত সেতু দিয়েই চনপাড়ায় প্রবেশের একমাত্র রাস্তা। বিশাল এলাকা হওয়ায় বস্তির নিয়ন্ত্রকরা গ্রামটিকে নয়টি মহল্লায় ভাগ করেছেন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এখানে পাঁচ-ছয়টি গ্রুপ সব সময়ই নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে থাকে। তবে সব কটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রক হলেন কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড (চনপাড়া বস্তি এলাকা) মেম্বার এবং রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা বজলুর রহমান ওরফে বজলু। নিজেকে তিনি কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দেন, যদিও এখনো তা ঘোষিত হয়নি। শুধু সাধারণ মানুষ নন, রহস্যজনক কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও বজলুকে সমীহ করে চলেন। ২৭ সেপ্টেম্বর র্যাব-১-এর একটি দল চনপাড়ায় অভিযানে গেলে তাদের ওপর হামলে পড়ে বজলুর লোকজন। চারজন র্যাব সদস্য গুরুতর আহত হন। র্যাবের গাড়িতে হামলা চালায় তারা। এ ঘটনায় বজলুসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে র্যাব মামলা করে।শুক্রবার ও গতকাল এসব বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে। তবে তাদের কেউই নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। বলেছেন, বজলু ও তার গংদের নিয়ে বহু রিপোর্ট হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। উল্টো তিনি আরও প্রভাবশালী হয়েছেন। তবে তারা বলেছেন, ১৫, ১৬ ও ১৭ এপ্রিল জয়নাল ও শাহীন গ্রুপের মধ্যে টানা তিন দিন সংঘর্ষের পর জয়নাল পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এর কয়েক দিন পরই জয়নাল গ্রুপের ‘র’ আদ্যাক্ষরের এক সদস্যের বোনকে তুলে নিয়ে আসেন শাহীন গ্রুপের সদস্যরা। টানা পাঁচ দিন আটকে রেখে ছেড়ে দেন। বিষয়টি বজলুকে জানানো হলেও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেননি। স্কুল কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করে ধর্ষিতার পরিবার। কিন্তু তারাও বজলুর ক্ষমতার কাছে নস্যি। তারাও কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস করেনি।
তবে বজলুর নামে কেবল রূপগঞ্জ থানাতেই হত্যা, অস্ত্র, মাদকের মামলা মিলিয়ে ১২টি মামলা রয়েছে। অস্ত্র ও খুনের মামলায় একসময়ের জেলখাটা বজলু এখন নাম লিখিয়েছেন সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তির খাতায়।
জানা গেছে, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ এলাকার সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে বজলুর সম্পৃক্ততার বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। চনপাড়া নামের এই অন্ধকার জগতের একচ্ছত্র অধিপতি তিনি। তার বিরুদ্ধে ‘টুঁ’ শব্দটি করতেও সাহস পান না চনপাড়ার কেউ। নিজের প্রয়োজনে যাকে-তাকে তুলে নিয়ে আসা হয় বজলুর ডেরায়। বাইরে থেকেও অনেক ভুক্তভোগীকে অপহরণ করে আনা হয় তার ডেরায়। টর্চার সেলে রেখে করা হয় অমানুষিক নির্যাতন। মাদক, চাঁদাবাজি, ডিসকো পার্টি, দেহব্যবসা, রাহাজানি, দখলসহ সব কটি সেক্টর থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসোহারা চলে যায় তার পকেটে।
বজলু সব সময় চলাফেরা করেন তিনজন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে। তার ২০-২৫ জনের বাহিনী আছে। এর মধ্যে রয়েছেন তার শ্যালক জাকির, মেয়েজামাই রিপন, রাসেল, রাজু আহমেদ রাজা, রায়হান, ইউসুফ, সাদ্দাম হোসেন ওরফে স্বপন, সায়েম, নাজমা, রিপন, শাওন, রেহান মিয়া, জাকির হোসেন, আনোয়ার হোসেন, শাহীন, হাসান, মিজু, রাজা, রুমা প্রমুখ।
যাদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ চনপাড়া বস্তি : এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে বিভিন্ন গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন বজলু। এর একটি বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন জয়নাল আবেদীন, একটি বাহিনী চালান সাদ্দাম হোসেন ওরফে স্বপন, এর বাইরে একটি বাহিনীর প্রধান হলেন মো. রাজা, একটি বাহিনীর নেতৃত্বে টাক রবিন, অন্য একটি গ্রুপের নেতৃত্বে শাওন। তবে সিটি শাহীন গ্রুপের প্রধান বৃহস্পতিবার র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন তাই এ বাহিনীর দায়িত্বে বর্তমানে রাজা। জয়নালের সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্বে রয়েছেন সোহরাব। তার মাধ্যমে ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই গ্রুপে রয়েছেন ইংলিশ মনির, গোনডার সাদ্দাম, গুলজার, ইমন, নিয়াজ, মুজাহিদ, নুরুজ্জামান, নাডা মুকতার, আইস ফারুক, ফেন্সি ফারুক ও শাকিল। শাকিল সম্পর্কে জয়নালের শ্যালক।
স্বতন্ত্র হিসেবে সম্প্রতি এলাকায় নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন রবিন ওরফে টাক রবিন। ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড তার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেন বজলু। তার গ্রুপে রয়েছেন টাক দুলাল, হীরা, ডালাই সেলিম, উজ্জ্বল, পিচ্চি আকাশ, লাল সুয়েল, বাদশা ফারুক, আল-আমিন, সাকিল ও শিক জাহাঙ্গীর।
চনপাড়ায় শাওন গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রায়হান। সম্পর্কে শাওনের বোনজামাই রায়হান। ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড এই গ্রুপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখেন বজলু। এই গ্রুপের সদস্যরা হলেন- কালা রায়হান, সুমন, সুজন, সাব্বির, মামুন, নয়ন, সায়েম, জালাল, বিকাশ, চোর সায়েম, মো. আলী, হিনগুল ফরাদ, ডাব মামুন, মাসুদ ও ইয়াসিন।
মিলাদ-মোস্তফা গ্রুপের মাধ্যমে ৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন বজলু। এই গ্রুপের অন্যতম সদস্য হলেন আরব আলী ও মোস্তফা। এর মধ্যে আরব আলী ও মোস্তফা অস্ত্র তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল গতকাল বলেন, ‘অল্প দিন হলো আমি নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেছি। রূপগঞ্জের একজন ইউপি সদস্যের অপকর্মের বিষয়ে কিছু তথ্য পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
মাদক-সাম্রাজ্য : চনপাড়া বস্তিতে মাদকের স্পট রয়েছে ২০০টির মতো। প্রতিটি স্পট থেকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা চলে যায় বজলুর পকেটে। সে অনুসারে প্রতিদিন কেবল মাদক স্পট থেকেই বজলুর কাছে যায় ন্যূনতম ৬ লাখ টাকা। কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বজলু নিয়ন্ত্রণ করেন এই ব্যবসা। প্রতিটি সিন্ডিকেটের একটি বা দুটি করে ওয়াচ পার্টি থাকে। এদের কাজ হচ্ছে পোশাকে বা সাদা পোশাকের পুলিশ-র্যাব দেখলেই সতর্ক করা। ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, মদ, গাঁজা বিক্রির জন্য রয়েছে পৃথক সিন্ডিকেট। সংঘর্ষ এবং খুনোখুনিও ঘটছে মাঝেমধ্যে। মাদক সিন্ডিকেটে বেশ কয়েকজন নারী সদস্যও আছেন। রুমার কাছ থেকে কেনা ইয়াবা বিক্রি হয় ৪০টি আস্তানায়। এ ছাড়া জুয়ার স্পট রয়েছে ২৫টির বেশি। অত্যাধুনিক অস্ত্র বেচাকেনা ও ভাড়া দেওয়া হয় চনপাড়া বস্তি থেকে।
সরেজমিন চনপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় নব কিশলয় গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান-সংলগ্ন এলাকা এবং বহর এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে দিনে-দুপুরেই চলছে মাদক বিক্রি। স্থানীয় রায়হানের বাড়ির ভিতরও চলছিল ইয়াবা সেবন। ওই বাড়িটি ইয়াবা সেবন কেন্দ্র হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
সন্ত্রাসী বাহিনীর দৌরাত্ম্য : স্থানীয়রা বলছেন, ২০০৩ সালে রূপগঞ্জের সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে ঝাড়ু-জুতা মিছিল করে আলোচনায় আসেন বজলু। ২০০৬ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় গ্রেফতার হন তিনি। ওই সময় তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা ছিল। তিন বছর আগেও চনপাড়ার ‘নিয়ন্ত্রক’ ছিলেন দুজন। একজন কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য বিউটি আক্তার ওরফে কুট্টি এবং অন্যজন ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বজলু। আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিউটির স্বামী এম এ হাসান এবং ২০১৯ সালের জুনে বিউটি খুন হলে বদলে যায় পরিস্থিতি। চনপাড়ার একক ‘নিয়ন্ত্রণ’ চলে আসে বজলুর কাছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যারাই চনপাড়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তারাই হত্যার শিকার হয়েছেন। কুট্টি ও হাসান ছাড়াও আলোচিত হত্যাকান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে- চান মিয়া, ফিরোজ সরকার, ফারুক মিয়া, পুলিশের এএসআই হানিফ মিয়া, ফালান মিয়া, আবদুর রহমান, খোরশেদ মিয়া, মনির হোসেন, আসলাম হোসেন, আনোয়ার, সজল ও সামসু হত্যা।
কায়েতপাড়ায় সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বজলুর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ৪২টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ৩০ কোটি টাকা লোপাট করেছেন বজলু।
হামলা-নির্যাতন-টর্চার সেল : স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, গত দুই মাসে অন্তত ১৩ জনকে তুলে নিয়ে জিম্মি করে অর্থ আদায় করেছেন বজলু। টাকা না দিলে মাদক মামলায় জড়ানো হবে এমন হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করেছেন তিনি। একেকজনের কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে।
হারুন অর রশীদ মিয়াজী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, চনপাড়ার গাজী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেতুবন্ধন এলাকায় বজলুর দুটি টর্চার সেল আছে। তার দেহরক্ষীরা জোর করে মানুষকে তুলে নিয়ে টর্চার সেলে নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করে। সাম্প্রতিক সময়ে ২০ জনকে তুলে নিয়ে অর্থ আদায় করা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- রতন, দ্বীন ইসলাম, আক্তার, কবির, আলমগীর (১), আলমগীর (২), ইউসুফ হাওলাদার, মো. রফিক, মোহাম্মদ আলী, ইদ্রিস, মাসুম প্রমুখ।
হারুন অর রশীদ মিয়াজী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার বাড়িতেও হামলা করেছেন বজলু। ইদ্রিসের কাছ থেকে বজলু অনেকবার টাকা নিয়েছেন। পুলিশের ভয় দেখিয়ে সপ্তাহখানেক আগে সাড়ে ৩ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন তিনি। তিন মাস আগে টর্চার সেলে নিয়ে রফিককে হাতুড়িপেটা করেছেন বজলু। তার শরীরে হাতুড়িপেটার ৭৮টি দাগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ বজলুর কথা না শুনলে তাকে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়া হয়। কয়েক দিন আগে শাকিল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীকে ১ হাজার ৩০০ পিস ইয়াবা ও ২০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে পুলিশে দিয়েছেন বজলু। অথচ ছয় মাস পর ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইনাল পরীক্ষা ওই শিক্ষার্থীর। কিন্তু বজলুর রোষানলে পড়ে তিনি সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।’
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া। তবে বর্তমানে ওই এলাকায় থাকেন না। তিনি অভিযোগ করেন, ‘বছর দুয়েক আগে আমার ১৯ বছর বয়সী মেয়ে বৃষ্টিকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়। মাদক ব্যবসায়ী ইউসুফের নির্দেশে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই সিদ্দিককে হাতেনাতে ধরে বজলুর কাছে দিই। কিন্তু বজলু তাকে ছেড়ে দেন। পুলিশ তদন্ত করে আবু বক্কর সিদ্দিক ও নাছিমা নামে দুজনকে আসামি করে চার্জশিট দিয়েছে। কিন্তু আসামিরা বজলু মেম্বারের লোক হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন না।’
স্থানীয় আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জয়নাল ও সিটি শাহীন গ্রুপের দ্বন্দ্বের বলি হয়ে মাস তিনেক আগে আমার ১৭ বছর বয়সী ভাগনে সজল প্রাণ হারায়। মাথায় ইট দিয়ে থেঁতলে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়। আমার ভাগনে মারা যাওয়ার আগের দিনও ৯ নম্বর রোডের আরিফকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ভাগ্যগুণে বেঁচে যায় সে।’
কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা আসলে প্রকৃত কথা বলতে পারি না। শুধু চনপাড়া নয়, পুরো কায়েতপাড়া ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ করা হয় চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে। দেশের সব অঞ্চলের অপরাধীরা সেখানে আশ্রয় নেয়। এসবের নিয়ন্ত্রক বজলু।’