বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ না হওয়া দুঃখজনক

ঢাকায় আসছেন এরদোগান

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ না হওয়া দুঃখজনক

মুস্তফা ওসমান তুরান

ঢাকায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া প্রয়োজন। যেখানে সব রাজনৈতিক দলের পর্যবেক্ষণ ও অংশগ্রহণ থাকবে।

রাজনৈতিক মতপার্থক্যের সমাধান করতে হলে সংলাপের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের সুযোগ আছে। তবে দুঃখজনকভাবে এটি এখন হচ্ছে না। গতকাল সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স  স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসাডর’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত। আগামী বছর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট  রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বাংলাদেশে আসবেন বলেও জানান তিনি। রাষ্ট্রদূত বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে ঢাকা সফরের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী বছর তুরস্কের জাতীয় নির্বাচনের পর যে কোনো সময় ঢাকা সফর করবেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।

গণতন্ত্রের প্রধান দায়িত্ব সরকারের উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, গণতন্ত্রে দুটি পক্ষ থাকে। একটি সরকার ও অপরটি বিরোধী পক্ষ। গণতন্ত্রে বিরোধী দলেরও দায়িত্ব আছে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সমস্যা আছে। কিন্তু তার সমাধানও আছে। আর সেটির মাধ্যম হচ্ছে সংলাপ। বিরোধী দল অংশ না নিলে বাংলাদেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার সুযোগ হারাবে।

রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চেষ্টা করছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। এটি বিদেশিদের নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আশা করি সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।

এখানে (বাংলাদেশ) মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কিছু বাধা এবং অনেক সময় মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করতে সমস্যা হয়। এটা তুরস্কসহ অনেক দেশেই রয়েছে বলে মন্তব্য করেন দেশটির রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে আগে ভুল বোঝাবুঝি হলেও এখন বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই সম্পর্কের ভিত্তি এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে চায় তুরস্ক। বাংলাদেশের প্রায় ৩ হাজার ডিফেন্স অফিসার তুরস্কে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত সমঝোতা থাকায় প্রতিরক্ষা পণ্য কিনতে পারবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে চাই। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা শুধু সামরিক সরঞ্জাম কেনাবেচার বিষয় নয়, এটা কৌশলগত সহযোগিতার বিষয়ও। বাংলাদেশ তুরস্ক থেকে ড্রোন, পেট্রোল ভেসেল প্রভৃতি কিনেছে। সামরিক সরঞ্জাম তৈরি যৌথ উদ্যোগেও হতে পারে।

তুরস্ক বাংলাদেশের মতো শরণার্থী সংকট মোকাবিলা করছে জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ওআইসি, আইসিজেসহ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরমে বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা করছে তুরস্ক। বাংলাদেশকে আরএমজি সেক্টরের বাইরে আইসিটি, ওষুধ শিল্পসহ বহুমুখী ও বৈচিত্র্যময় শিল্পের রপ্তানিতে গুরুত্ব দেওয়ার মত দেন তিনি।

মুস্তফা ওসমান তুরান বলেন, তুরস্কের জাতীয় নির্বাচনের পর আগামী বছর যে কোনো সময় প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ঢাকা সফর করবেন। দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আমরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে চাই।

চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সংলাপের মাধ্যমে টেকসই সমাধানে রাশিয়া- ইউক্রেনের সঙ্গে তুরস্ক কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, কূটনীতিক ও সাংবাদিকরা অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর