আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বিএনপি অন্তর্জ্বালার কারণেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায় না। তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে অনীহা দেখাচ্ছে। কারণ এ উদ্যানে জড়িয়ে আছে স্বাধীনতার নানা স্মৃতি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমোদন দিলেও বিএনপি সেখানে তা করতে অনীহা দেখানো সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপির অন্তর্জ্বালা হচ্ছে, তাদের দোসর, পেয়ারে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকালে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মিত্রবাহিনীর কাছে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করে। তাদের এ আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ২৬ মার্চ শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে শত্রুদের মোকাবিলা করার জন্য যার যা আছে, তা-ই নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেন। যেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল, জাতির পিতা দেশবাসীকে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, সেখানে তারা সমাবেশ করতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। সে কারণেই বিএনপি জেলা ও বিভাগে বড় বড় সমাবেশ করতে পারছে। বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তারা কোথাও দাঁড়াতে দেয়নি। আমরা যেখানেই সমাবেশ-মিছিল করতাম, সেখানেই গ্রেনেড ও বোমা হামলা চালানো হতো। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হতো। আমাদের সহজে সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না। রাসেল স্কয়ারে আমরা ২০ জন নিয়ে দাঁড়ালে পুলিশ হামলা চালাত। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। প্রবীণ নেত্রী মতিয়া চৌধুরীকে টেনেহিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে নেওয়া হতো। হাজার হাজার নেতাকর্মী-নারীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হতো। তিনি বলেন, সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমোদন দিয়েছে। তাদের জনসভা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার জন্য বলা হয়েছে, ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা ইজতেমা (তুরাগ) মাঠে করতে পারে। এখানে প্রায় ৫০ লাখ লোকের জমায়েত হয়। তারা পূর্বাঞ্চলের শিল্প বাণিজ্য মেলার মাঠে নিতে পারে। সেখানে ২০ লাখ লোক এনে দেখাতে পারে যে জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য হলে সেখানে ২০ লাখ লোক এনে শান্তিপূর্ণভাবে করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বলেছে সহযোগিতা করবে, সরকার বলেছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা বলছি, তোমরা জনসভা কর। কিন্তু গণতান্ত্রিক কর্মসূচির নামে যদি সন্ত্রাস-নাশকতা তৈরি করে তাহলে সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী মানুষ ছাড় দেবে না। যেখানেই সন্ত্রাস-সেখানেই মোকাবিলা করা হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে না- পল্টনে করবে তাহলে কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো। জবাবে সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমি এখন সরকারে নেই। দলে আছি। সরকারের পক্ষে জবাব আমি দিতে পারব না। রাজনৈতিকভাবে আমার দলের পক্ষে কথা বলতে পারব। বিএনপি বড় সমাবেশ করতে চায়। সে কারণে হয়তো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে অনুমোদন দিতে পারে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করলে লোক সমাগম বড় হবে। আমরাও চাই বিএনপি তাদের সাংগঠনিক শক্তি দেখাক। তিনি বলেন, বিএনপি যাতে সমাবেশ নির্বিঘ্নে করতে পারে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সম্মেলন ৮ ডিসেম্বরের বদলে ৬ ডিসেম্বর করেছেন। ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এরপর সেই মঞ্চ-প্যান্ডেল গুটিয়ে ফেলা হবে। বিএনপি যাতে সময় নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ বানাতে পারে। যে কারণে ছাত্রলীগের সম্মেলন নির্ধারিত তারিখ থেকে দুই দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। কোনো সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়া সহজ হলেও এগিয়ে আনা সহজ না। কারণ এগিয়ে আনার ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা থাকে। কিন্তু আমরা সেই কাজটি করেছি। এটাই শেখ হাসিনার উদারতা। আমরা যদি তাদের সহযোগিতা করতে না চাইতাম তাহলে এটা কেন করব? আমরা অর্থ সাশ্রয়ের জন্য এক মঞ্চে সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন করছি। সেখান থেকেও আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চাই বলেই বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলছি। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপির কর্মসূচি মানেই আগুন সন্ত্রাস-জ্বালাও পোড়াও। সে কারণে কিছু কিছু জায়গায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘট ডাকে। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যেন কোনো প্রকার ধর্মঘট না ঘটে সেজন্য মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।