গল্পটা বেশ পুরনো। তার পরও লোকের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায় বলে নতুনই মনে হয়! ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে একক নৈপুণ্যে বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। সেই গল্পটা একজন ফুটবলপ্রেমী কখনই ভুলতে পারে না। আবার কি এমন গল্প লেখা হবে কাতার বিশ্বকাপে?
ম্যারাডোনার মতোই আর্জেন্টাইনরা ভালোবাসে লিওনেল মেসিকে। মাঠে ময়দানে দুজনকে পাশাপাশি স্থান দেয় তারা। বুকে-পিঠে থাকেন দুজনেই। মেসির কাছে প্রায়ই তারা আকুতি জানায়, তুমি আমাদের আরেকটা বিশ্বকাপ ট্রফি দাও। ম্যারাডোনার মতোই কোনোদিন ভুলব না তোমায়। মেসির প্রতি এই ভালোবাসা কেবল আর্জেন্টাইনদের একার নয়। পুরো ফুটবল দুনিয়ারই। অনেক দেশ থেকে ছুটে আসা ফুটবলপ্রেমীরা চান মেসিই জিতুক বিশ্বকাপ। এল সালভাদর থেকে আসা ভালিয়েন্তে যেমনটা বললেন। ‘আমি লিওনেল মেসির ভক্ত। তার খেলা দেখার ইচ্ছাই আমাকে নিয়ে এসেছে এখানে। মেসি বিশ্বকাপ জিতলে, তা হবে এক দারুণ ব্যাপার।’ আসলেই কী আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতবে? কোন মানদ ? পোল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ একটা জয় পেয়েছে বলেই কী! নাকি এখানে অন্য কোনো ব্যাপার আছে! আর্জেন্টাইন সাংবাদিক লেভিনস্কি। তিনি ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ থেকে আর্জেন্টিনা দলের পিছু পিছু ছুটে চলেছেন বিশ্বময়। মারিও কেম্পেসদের বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী ছিলেন তিনি। দিয়েগো ম্যারাডোনার দলটাকে অদম্য সাহসে ভর করে বিশ্বকাপ ট্রফি জয় করতে দেখেছেন। তিনি বললেন, ‘আমি ঠিক নিশ্চিত নই, মেসিরা বিশ্বকাপ জয় করতে পারবেন কি না। তবে এই দলটা আমাকে কয়েক যুগ পেছনে নিয়ে গেছে। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে। সেসময় দিয়েগো ম্যারাডোনা একজনই ছিলেন দলে। অন্যরা গড়পড়তা। এই দলটার দিকে তাকাও। এখানে মেসিকে ছাড়া আর কাউকে তোমার চোখে পড়বে না। আর মেসি এমন একজন ফুটবলার যিনি দিয়েগো ম্যারাডোনার মতোই ফুটবল খেলার প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।’
লেভিনস্কির মতোই আস্থা আছে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। এই জন্যই লিওনেল মেসি গত ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করার পরও তারা হাততালি দিয়ে মেসিকে সাহস জুুগিয়েছেন। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে একটা পেনাল্টি মিস করা যেন কোনো ব্যাপারই নয়! মেসির প্রতি এমনই আস্থা আর্জেন্টাইনদের। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে মোট ১৪টা গোল করেছিল। এর মধ্যে ৫টা গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা। আরও কয়েকটা গোলে ছিল তার প্রত্যক্ষ অবদান। লিওনেল মেসি এবার গ্রুপ পর্বেই করেছেন দুই গোল। সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও একটা। সামনে আরও অনেকটা পথ বাকি। ম্যারাডোনার মতো তিনিও কী আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন না! লিওনেল মেসিরা কতদূর যেতে পারবেন তা কেবল সময়েই জানা যাবে। আপাতত নকআউট পর্ব নিশ্চিত করার আনন্দ উদযাপন করছেন আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা। গতকাল হালকা অনুশীলনের পর পরিবারের সঙ্গে মিলে বারবিকিউ পার্টি করেছেন তারা। দলের মধ্যে ফুরফুরে ভাব আনতে কোচের সঙ্গে মিলে নানা আয়োজন করেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। যোগ্য নেতার ভূমিকাই পালন করছেন তিনি।