চরম বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের যৌথ সম্মেলন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলন গতকাল সকালে শুরু হয়ে বেলা পৌনে একটায় শেষ হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চরম বিশৃঙ্খল আর হট্টগোল, মঞ্চে নেতা-কর্মীদের অহেতুক ওঠানামা, আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তৃতার সুযোগ না দেওয়াসহ নানা অসংগতি চোখে পড়ে। এতে রুষ্ট হয়ে সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা কি ছাত্রলীগ? কোনো শৃঙ্খলা নেই। জয়-লেখক (ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) এটা কী ছাত্রলীগ। পোস্টার নামাতে বললাম তারা নামায় না। এরা কারা আমি খোঁজ নিচ্ছি। এত নেতা স্টেজে, তাহলে কর্মী কোথায়?
এদিকে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতা বক্তৃতার সুযোগ পাননি। তারা সম্মেলন চলাকালেই মঞ্চ ছেড়ে চলে যান। অবশ্য এই চার নেতার দুজন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, তারা প্রধান অতিথির সঙ্গে কথা বলেই মঞ্চ ত্যাগ করেছেন।
কারণ গতকাল বিকালে চট্টগ্রামে একটি বিশেষ বর্ধিত সভায় অংশ নিতে তাদের বিমানবন্দরে যেতে হয়েছে। প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের যখন মঞ্চে ওঠেন তখন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়ের অনুসারীরা দৌড়ে মঞ্চে উঠে হৃদয়ের নামে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যার নামে স্লোগান দেবেন তাকে নেতা বানাব না। নেত্রীকে বলে দেব। স্লোগান যে দেবে সে বাদ। বলে দিচ্ছি।’ হৃদয় ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী। মঞ্চে এত নেতা-কর্মীর ভিড় সরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ধাক্কা-কিল-ঘুসি দিয়ে মঞ্চ ফাঁকা করেন। এদিকে প্রথা অনুযায়ী মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলনে সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দাওয়াত করা হয় এবং তারা মঞ্চে বসেন। কিন্তু সদ্য বিদায়ী কমিটি নামকাওয়াস্তে দাওয়াত দিলেও মঞ্চে জায়গা রাখেননি। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এসে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সাবেক নেতাদের মঞ্চে ডাকেন। গতকাল সম্মেলনে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় সম্মেলন। সম্মেলনের শুরু থেকেই মঞ্চে ছিলেন ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। ১১টার পর সম্মেলনের উদ্বোধক আল নাহিয়ান খান বক্তৃতা করেন; তিনি উপস্থিত অতিথিদের নাম ঘোষণায় খরচ করলেন ১৫ মিনিটের বেশি সময়। পরে সম্মেলনের সভাপতি ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন আবারও উপস্থিত অতিথিদের নাম বলেন। পরে তিনি সঞ্চালক হিসেবে দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান, উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয় ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদের নাম ঘোষণা করেন। সঞ্চালক মেহেদি পাঁচ মিনিটের বেশি বক্তৃতা করেন। অন্যরাও অনেক সময় নিয়ে বক্তৃতা করেন। সাড়ে ১১টার দিকে আমন্ত্রিত অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন মহানগর ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরা। তাদের ক্রেস্টও দেওয়া হয়। সেখানে ব্যয় হয় ১০ থেকে ১৫ মিনিট। তখন পর্যন্ত প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের সম্মেলনে এসে পৌঁছেননি। তিনি এলেন ১১টা ৫০ মিনিটের পর। তাঁর আসার পর বক্তা হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নাম ঘোষণা করলে তিনি মাইকের সামনে দাঁড়ান। এ সময় মঞ্চে থাকা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সঞ্চালক হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলেন। হৃদয় পরে প্রধান অতিথির নাম ঘোষণা করেন। বেলা ১২টার পর মঞ্চ থেকে চলে যান জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক। এ ছাড়া বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি আমন্ত্রিত অতিথি আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মোহাম্মদ মান্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। ওবায়দুল কাদের ২৬ মিনিটের বেশি সময় বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্য শেষে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ করেন। রীতি অনুযায়ী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে। ওবায়দুল কাদের তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজকের নানকের (জাহাঙ্গীর কবির নানক) মতো আপনাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সময়ের অভাবে বক্তৃতা করতে পারলেন না। আপনারা মাইক ধরলে ছাড়েন না। পরে তো বলবেন খেয়াল থাকে না। আজকে জুমার দিন এটা খেয়াল থাকেনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, এই ছাত্রলীগ আমরা চাই না। সুশৃঙ্খল করুন। সুসংগঠিত করুন। কথা শুনবে না এই ছাত্রলীগ আমাদের দরকার নেই। অপকর্ম করবে এই ছাত্রলীগ দরকার নেই। দুর্নামের ধারা থেকে ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এটাই অঙ্গীকার। আমন্ত্রিত অনেকেই বক্তৃতা করতে পারেননি বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নেতারা বক্তৃতা করতে পারেননি তাহলে দাওয়াত দিলেন কেন? একটু একটু করেও বলতে পারল না? আপনারা দুজনেই এক ঘণ্টা! মনে নেই আজ শুক্রবার? লেখকের না হয় মনে নেই। জয়ের কি মনে ছিল না? এটা কোন ছাত্রলীগ? সম্মেলন থেকে চলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘যখন প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখবেন তখন আমরা চলে যাব, এটা আগ থেকে নির্ধারণ করা ছিল। এটা আলোচনা নয় সিদ্ধান্ত ছিল।’