সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, উন্নয়ন হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন ও চাহিদা মতো উন্নয়ন হচ্ছে না। সরকারের উন্নয়নের অর্থ দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। ফলে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ একই সমস্যা নিয়ে বারবার আওয়াজ তুললেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তিনি গতকাল দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম আয়োজিত ‘জাতীয় উন্নয়ন এবং স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক জনশুনানি অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণ দিচ্ছিলেন। রেহমান সোবহান বলেন, আগেও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সারা দেশ থেকে মানুষ এসে নিজেদের নানারকম সমস্যা ও কষ্টের কথা শুনিয়েছেন। এখানেও একই কথা বলা হচ্ছে। পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এখানে যেসব আওয়াজ ওঠে এবং সরকারের মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রতিক্রিয়া করা হচ্ছে তার মধ্যে কোনো মিল নেই। তিনি বলেন, তৃণমূল থেকে যে আলোচনা আসছে, মানুষ আওয়াজ দিচ্ছে। মন্ত্রণালয় পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, দেশ উন্নত হয়েছে। কিন্তু সমস্যা শনাক্ত করবে, সে ধরনের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর যেসব তথ্য সরবরাহ করছে, তার সঙ্গেও তৃণমূলের আওয়াজের মিল নেই। বঙ্গবন্ধুর প্ল্যানিং কমিশনে কাজের স্মৃতিচারণা করে রেহমান সোবহান বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল কর্মজীবনের শুরুতে তাঁর প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য ছিলাম। আমার সেই সময়কার ভালো স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা আছে। দেশ কয়েক বছরে অনেক উন্নতি করেছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশকে পিছিয়ে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সন্তানের সমস্যা, আদিবাসীর সমস্যা, চা শ্রমিকের সমস্যা, তৈরি পোশাক শ্রমিকের সমস্যা- কয়েক বছর ধরে একই সমস্যা চলে আসছে। মূল সমস্যা কী, এত বছর পর এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন, বছরের পর বছর একই সমস্যা থাকছে কেন, সমস্যার সমাধান হয়নি কেন- এমন সব প্রশ্ন করে তিনি বলেন, যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে আমাদের যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, সাক্ষরতার হার বাড়ছে, দারিদ্র্য কমছে- মাঠপর্যায় থেকে মানুষ এ ধরনের আওয়াজ দিতে থাকলে আমাদের সব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তৃণমূল জনমানুষের যে আওয়াজ তা সমাধানে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সংলাপের আয়োজন করতে হবে। এসব সংলাপে উঠে আসবে এসডিজি বাস্তবায়নে কোথায় ফারাক আছে, সেখান থেকে প্রাপ্ত ফাইন্ডিংসগুলো চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় পর্যায়ের দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আদিবাসী মানুষ সেই কবে থেকে একই কথা বারবার বলছে। একসময় আদিবাসী সংখ্যা অনেক ছিল। অবহেলা ও বৈষম্য নীতির কারণে এ সংখ্যা কমে গেছে। যারা আছে, তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। যেখানে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, মানুষের জন্য সরকারের খরচ হচ্ছে সেখানে সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি। তাদের জমির সমস্যা আছে, রেকর্ড হয় না। এর মূলে রয়েছে স্থানীয় মাস্তান। এসব মাস্তান সমতল বা পাহাড়ের অধিবাসীদের জমি দখল করে আছে। যেখানে সরকারের প্রতিশ্রুতি আছে, যেখানে নীতি আছে, আইন আছে সেখানে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন রেহমান সোবহান। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা জোরদার করতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া এমন হতে হবে যেখানে ভয়ভীতিহীন, মুক্ত ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হবে। কেউ যদি নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসে তাহলে জনগণের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতা থাকবে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণকে তার ভয় থাকবে; জনগণের দাবি পূরণ না করলে পুনরায় নির্বাচিত হতে পারবে না। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হলে টাকা খরচ করে ও অস্ত্র ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করে দেবে, এমন চিন্তা করবে না।