মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

স্মার্ট বাংলাদেশ হবে ২০৪১ সালের মধ্যে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্মার্ট বাংলাদেশ হবে ২০৪১ সালের মধ্যে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা চলে যাব। বাসস

প্রধানমন্ত্রী গতকাল ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, জয় সিলিকন টাওয়ার, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল জাদুঘর ও একটি সিনেপ্লেক্স এবং বরিশাল জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার উদ্বোধন করেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ এমপি।

স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম। অনুষ্ঠানে ‘অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা ২০২২’ ও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার’ বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। আমরা এখানেই থেমে থাকিনি, ২১০০ সালের বদ্বীপ কেমন হবে, সে পরিকল্পনাও নিয়েছি।

স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে। সেখানে নাগরিকরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে এবং এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এবং সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে। বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে তরুণ প্রজন্মকে সৈনিক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে তোমাদের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত হতে হবে। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০২১’-এর মূল ভিত্তি হিসেবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দেন। সরকারপ্রধান বলেন, ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম। অর্থাৎ ২০২১ থেকে ২০৪১ কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে তার একটা কাঠামো, পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করে বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমি রেখে যাচ্ছি। এ বদ্বীপ প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয় এবং উন্নত দেশে স্বাধীনভাবে সুন্দরভাবে যেন তারা স্মার্টলি বাঁচতে পারে সে ব্যবস্থাও করে দিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, এখন সব নির্ভর করছে আমাদের ইয়াং জেনারেশন ও যুবসমাজের ওপর। ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের উন্নতি’- এটাই ছিল আমাদের ২০১৮-এর নির্বাচনী ইশতেহার। আমরা সে কাজই করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইসিটি অবকাঠামো ও কানেকটিভিটি, ই-গভর্নমেন্ট এবং ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে ২০০৮ সালে নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে। সারা দেশে ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি দিয়েছে এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছে। বাংলাদেশের এ রূপান্তরের নেপথ্য কারিগর হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পুত্র তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমার ছেলে জয় যদি আমাকে পরামর্শ না দিত তাহলে হয়তো আমার পক্ষে এটা করা সম্ভব হতো না।

১৯৯২ সালে বিএনপির আমলে বাংলাদেশকে বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবল লাইন-সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপে সংযোগ দিতে চাইলে ‘তথ্য পাচার’ হয়ে যাওয়ার অজুহাতে তা খালেদা জিয়ার সরকার প্রত্যাখ্যান করে। অন্যদিকে ২১ বছর পর সরকারে এসে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ১০ হাজার স্কুলের জন্য অর্ধেক দামে নেদারল্যান্ডস থেকে কম্পিউটার আমদানির চুক্তি করলে কেবল শেখ রেহানার কন্যা, বর্তমান ব্রিটিশ লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীর নামে সে কোম্পানির নাম ‘টিউলিপ’ হওয়ায় পরবর্তী বিএনপি সরকার সে চুক্তি বাতিল করলে দেশ তো কম্পিউটার পায়ইনি উপরন্তু অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ৩২ কোটি টাকা জরিমানা দিয়ে নিষ্কৃতি পায় বলেও তাদের অজ্ঞানতার উদাহরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা সরকারে এসে এ খাতের উন্নয়নে নতুন নীতিমালা গ্রহণ করি। সফ্টওয়্যার, ডাটা-এন্ট্রি, ডাটা-প্রসেসিংয়ের উন্নয়নে আইটি ভিলেজ ও হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিই। শুল্কমুক্তভাবে কম্পিউটার, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যার আমদানির অনুমোদন দিই।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কানেকটিভিটি রয়েছে বলে করোনার মধ্যেও কোনো কাজ থেমে থাকেনি বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে এমনকি দ্বীপ-পাহাড়-হাওর-চরাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিকাশ নিশ্চিত করেছি। করোনার সময় ঘরে বসেও অনেকে কাজ করে পয়সা উপার্জনের সুযোগ পেয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ৮০০ ডিজিটাল সেন্টার চালু আছে। যেখানে একজন নারী ও একজন পুরুষ উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ৫২ হাজারের বেশি ওয়েবসাইটসমৃদ্ধ জাতীয় তথ্য বাতায়ন তৈরি করেছি। আমাদের ‘মাই-গভ’ মডেল এখন ফিলিপাইনে এবং ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ফর স্কিলস্, এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট, অ্যান্ড অন্ট্রাপ্রেনিওরশিপ’ সোমালিয়ায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এখন অনেক দেশই বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে এবং বাংলাদেশের কাছ থেকে সহযোগিতাও নিচ্ছে। আমরা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর পাশাপাশি করোনাকালীন ভার্চুয়াল কোর্টও চালু করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যখন বিদেশে যান তখনো তাঁর ফাইল দেখা বন্ধ হয় না। কেননা তাঁর সরকার ২০১৯ সালে ‘ই-গভর্নমেন্ট মাস্টারপ্ল্যান’ প্রণয়ন করেছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ সরকারি সেবা অনলাইনে প্রদান করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ইন্টারনেটকে আরও সহজলভ্য করতে ব্যান্ডউইথের দাম কমানো এবং মোবাইল ফোনকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

সর্বশেষ খবর