মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

বিএনপি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চায়

জাহাঙ্গীর কবির নানক

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চায়

বিএনপি রাজনীতির মাঠে ভাড়াটিয়া এনেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বাসা বাড়িতে ভাড়াটিয়া আনা হয়। বিভিন্ন খেলায় খেলোয়াড় ভাড়া করা হয়। কিন্তু এখন দেখছি রাজনীতির মাঠেও ভাড়াটিয়া। বিএনপি ভাড়াটিয়াদের নিয়ে খেলছে।

গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিতে নিজ বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি ও আন্দোলন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। দীর্ঘদিন আগেই এই তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ হঠাৎ করে এই দিনে বিএনপি সারা দেশে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতেই প্রমাণ হয় বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চায়। দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্মেলন মানেই সংযোগ-বিয়োজন। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে একটি যুগোপযোগী নেতৃত্ব উপহার দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে নানক বলেন, নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। এতে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। নির্বাচন কেউ বানচাল করতে পারবে না। নির্বাচনী খেলায় নির্বাচন কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করবে। দেশের উন্নয়ন-অর্জনের কারণে এই খেলায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই বিজয়ী হবেন। তিনিই চারবারের টানা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করবেন। প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা মাঠ জরিপ করছেন। তিনি নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। যারাই যোগ্য তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। বির্তকিত, জনবিচ্ছিন্ন কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

তারা ভাড়াটিয়াদের নিয়ে খেলছে। নবীন প্রবীণের সমন্বয়ে দলীয় নেতৃত্ব উপহার দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ সহনশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সে কারণেই বিএনপিকে ১০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এজন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল দুই দিন এগিয়ে আনা হয়। বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে ৮-৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলন করা হয়। কিন্তু তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পছন্দ না। কারণ সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্থন করেছিল। ১০ ডিসেম্বর নিয়ে তারা অনেক লম্পঝম্প করেছিল, কিন্তু কিছুই করতে পারেনি। এখন আবার ২৪ ডিসেম্বর নতুন কর্মসূচি দিয়েছে। শুধু বিএনপিই নয়, একই কর্মসূচি দিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত, আওয়ামী লীগ বিরোধীরা যুক্ত হয়ে এক হয়েছে। আমি আগেই বলেছি, সব রসুনের গোড়া এক জায়গায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি নিয়ে একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছিল জিয়াউর রহমান। এই প্ল্যাটফর্ম হলো বিএনপি। সে কারণে স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াতের সঙ্গে তাদের গাঁটছড়া বাধা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতিতে সাপকে বিশ্বাস করা যায়, বিএনপিকে বিশ্বাস করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যে অগ্রগতি, উন্নয়ন হচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে সেগুলো তাদের সহ্য হচ্ছে না। সারা বিশ্বে অর্থনীতি ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনীতি প্রবাহ ধরে রেখেছেন। সে কারণে বিএনপি এবং তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের ভালো লাগে না। তাই তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কিন্তু তারা সফল হবে না। সংসদ থেকে বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের এই কয়েকজনের পদত্যাগে জাতীয় সংসদে কোনো প্রভাব পড়বে না। তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী উপনির্বাচন হবে।

বিএনপির ১০ দফা প্রসঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি যে ১০ দফা দিয়েছে তা আওয়ামী লীগ আমলে নিচ্ছে না। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, দেশের জনগণও আমলে নিচ্ছে না। কারণ এতে নতুন কিছু নেই। চর্বিত চর্বন। তবে এটা ঠিক যে, তারা আবারও জঙ্গিবাদ, হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে দেশের অর্থ পাচার, অস্ত্র চোরাচালান, সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য করার লাইন্সেস চায় দেশবাসীর কাছে। দেশের মানুষ অনেক সচেতন। জঙ্গিবাদের লাইন্সেস বিএনপিকে দেবে না। তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচি যেমন সুপার ফ্লপ হয়েছে, ২৪ ডিসেম্বরও তাই হবে। তাদের কর্মসূচিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। ২৪ ডিসেম্বর যদি কোনো ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি করতে চায় তাহলে আমাদের দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের যে জোয়ার সৃষ্টি হবে, সেই জোয়ারে তাদের আন্দোলন ভেসে যাবে। জাতীয় কাউন্সিলে কেমন নেতৃত্ব আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের দিকে দেশের মানুষ তাকিয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ৪২ বছর ধরে দলটির সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ঝড়-ঝঞ্ঝা, জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে দলটিকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী সংগঠনে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বলেন, সম্মেলন মানেই নতুন নেতৃত্ব আসবে, পুরনো নেতৃত্ব চলে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। যারা নিজেদের কর্মকাণ্ডে সফলতা প্রমাণ করতে পারেননি, তারা ঝরে যাবেন। নতুন রক্ত সঞ্চারিত হবে। কী করলে দল আরও ভালো চলবে, তিনিই বলতে পারবেন। বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও জেলা সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন আগে করার চেষ্টা করছি। যেসব সংগঠনের মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেগুলো জাতীয় সম্মেলনের আগে শেষ করতে না পারলেও তিন মাসের মধ্যেই শেষ করা হবে। সারা দেশে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দল নেই। সারা দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা যেন প্রতিহিংসায় পরিণত না হয় সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি।

সর্বশেষ খবর