মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার গতিশীল রাখতে হবে

মানিক মুনতাসির

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার গতিশীল রাখতে হবে

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, নতুন বছর হবে অনেক চ্যালেঞ্জের। নির্বাচনের বছর বলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চাপ থাকবে। আবার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমও গতিশীল রাখতে হবে।

গতকাল পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন সেন্টারের (পিপিআরসি) ধানমন্ডির কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, নতুন বছরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে করণীয়, সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেন। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কভিড যখন ধাক্কা দিয়েছিল তখন কিন্তু এতটা অর্থনৈতিক চাপ ছিল না। বরং এখন সেটা বেড়েছে। এজন্য ২০২৩ সালে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর তা করতে না পারলে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং ছিন্নমূল মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে। দেশের বেশির ভাগই মানুষই কিন্তু এসব কাতারে রয়েছে। তিনি বলেন, ২০২০-২১ ছিল কভিডের ধাক্কার বছর। ২০২২ ছিল রিকভারির বছর। কিন্তু রিকভারিটা সেভাবে হয়নি। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ২০২২-এ এসে দুটি বড় হোঁচট খেয়েছি। একটা হলো বৈশ্বিক, আর দ্বিতীয়টা হলো জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের। গত এক দশক আমরা মোটামুটি স্ট্যাবল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সেটা যে টেকসই ছিল না তার প্রমাণ আমরা পেয়ে গেলাম ২০২২-এ এসে। এটা একদিকে বৈশ্বিক কারণ হলেও আমাদের যে এনার্জির পলিসির ঘাটতি ছিল, সেটা একেবারে পরিষ্কার হয়ে সামনে এসেছে চলতি বছর। হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, যে সংকট এখন চলছে এটা অবশ্যই বৈশ্বিক সংকটের অংশ। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক সংকট, ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থা, জ্বালানি ও বিদ্যুতের সংকট, এটা তো জনগণ তৈরি করেনি। এটা উন্নতি করার সুযোগ ছিল। তিনি বলেন, আমরা বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবস্থাপনায় এক রকম ব্যর্থই হয়েছি। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন বাজার ধরতে পারিনি। এটা ঠিক যে কভিড আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু কভিড পরবর্তী অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছিল। সেগুলোও আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। রাজনীতি ও চলমান উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, রাজনৈতিক উন্নয়ন নিয়েও কথা বলা উচিত। কেননা আমাদের এখানে টেকসই রাজনৈতিক উন্নয়ন বলতে কিছু নেই। পৃথিবীর অনেক দেশই শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য টেকসই রাজনৈতিক উন্নয়নের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে সেটা গড়ে ওঠেনি।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থকে বিবেচনায় না নিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। এখানে রাজনৈতিক পুনর্গঠন জরুরি। শুধু অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার করে এ সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইএমএফ থেকে যা পাওয়া যাবে তা দিয়ে সংকটের সমাধান হবে না। তবে এটা সাময়িক কিছুটা স্বস্তি দেবে। এদিকে মুডিস (সিঙ্গাপুরভিত্তিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা) বলছে, বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং ডাউন হতে চলেছে। সেটারও একটা প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। তিনি বলেন, এখন টাকার মূল্যমান কত, রিজার্ভ কত, জিডিপি কত, মাথাপিছু আয়, মূল্যস্ফীতি, দারিদ্র্যবিমোচন এসবের মধ্যে অনেকগুলোর ডাটা ও পরিসংখ্যান হালনাগাদ নয়। আবার এসব নিয়ে নানারকম বিতর্কও রয়েছে। এগুলো নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নও আছে। ফলে এটাও একটা বড় সংকট। আমরা যদি এ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে না পারি তবে সমস্যা আরও বাড়বে।

সর্বশেষ খবর