মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আরও সাহায্য চেয়ে নিয়াজির বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আরও সাহায্য চেয়ে নিয়াজির বার্তা

১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শেষ ঘণ্টা বাজার অপেক্ষা। ঢাকা ছাড়া দেশের অধিকাংশ এলাকা বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণে। হানাদার বাহিনীকে মরণ কামড় দিতে চারদিক থেকে এগিয়ে আসে যৌথ বাহিনী। পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী ঢাকার প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকায় ঢুকে পড়ে। নিরস্ত্র জনতাও লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। জলে-স্থলে-আকাশে সবদিকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে হানাদাররা।   জেনারেল নিয়াজি আরও সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠান রাওয়ালপিন্ডিতে। এদিন চারদিকে উড়তে থাকে বাঙালির বিজয় নিশান। দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার পাকিস্তানি আত্মসমর্পণ করে। শুধু ময়নামতীতেই আত্মসমর্পণ করে ১ হাজার ১৩৪ জন। সৈয়দপুরে আত্মসমর্পণ করে ৪৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়কসহ ১০৭ পাকিস্তানি সেনা। খুলনা, বগুড়া ও চট্টগ্রামে হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও স্থানীয় মানুষের অবিরাম যুদ্ধ চলে। মানিকগঞ্জ, নীলফামারি, বগুড়া জেলা হানাদারমুক্ত হয়। তখন যৌথবাহিনীর লক্ষ্য ঢাকাকে মুক্ত করা। ৫৭ নম্বর ডিভিশনের দুটো ব্রিগেড এগিয়ে আসে পূর্বদিক থেকে। উত্তর দিক থেকে আসে জেনারেল গন্ধর্ব নাগরার ব্রিগেড এবং টাঙ্গাইলে নামা ছত্রীসেনারা। পশ্চিমে ৪ নম্বর ডিভিশনও মধুমতী পার হয়ে পৌঁছে যায় পদ্মার তীরে। লে. কর্নেল শফিউল্লাহর ‘এস’ ফোর্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে ডেমরা পৌঁছায়। যৌথবাহিনীর অগ্রবর্তী সেনাদল শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী অতিক্রম করে ঢাকার ৫-৬ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। রাত ৯টায় মেজর জেনারেল নাগরা টাঙ্গাইল পৌঁছে মুক্তিবাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যদি আমাদের বিনা বাধায় এতটা পথ পাড়ি দিতে সাহায্য না করতেন, তাহলে আমাদের বাহিনী দীর্ঘ রাস্তায় যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ত। পথে পথেই আমাদের অনেক শক্তি ক্ষয় হয়ে যেত।’

পাকিস্তানকে রক্ষায় মরিয়া মার্কিন-চীনের কূটনৈতিক শেষ চেষ্টাও এদিন ব্যর্থ করে দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তৃতীয়বারের মতো ভেটো দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই দিনই বঙ্গোপসাগরের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর যাত্রা শুরু করে বলে খবর আসে। তবে শেষ পর্যন্ত নৌবহর আর আসেনি। তিন দিনের মাথায় চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ করে দখলদার বাহিনী। ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের যেসব কর্মী, কূটনৈতিক, প্রতিনিধি ও বিদেশি নাগরিক নিরাপদে সরে আসতে চান বাংলাদেশ সরকার তাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবে।’ এদিকে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান তখন বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্টুডিওতে বসে কামাল লোহানী, আলী যাকের ও আলমগীর কবির ঘন ঘন সংবাদ বুলেটিন পরিবেশন করতে থাকেন। সেই বার্তায় শুধুই বিজয়ের খবর। প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন জেলা মুক্ত হওয়ার খবর আসতে থাকে। এদিন তৎকালীন গভর্নর হাউসে গভর্নর ডা. মালিকের মন্ত্রিসভা ও স্বাধীনতাবিরোধী দালালদের জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে বৈঠক চলাকালে মিত্রবাহিনীর বিমান গভর্নর হাউসে বোমাবর্ষণ করে। গভর্নর ডা. মালিক তখনই পদত্যাগ করেন এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে রেডক্রসের গাড়িতে করে নিরপেক্ষ এলাকা বলে ঘোষিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গিয়ে আশ্রয় নেন।

সর্বশেষ খবর