বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

গাইবান্ধায়-৫ আসনের উপনির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগের রিপন

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন জয়ী হয়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৭৮ হাজার ২৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৭৫২ ভোট।

সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ হলরুম থেকে ফল ঘোষণা করেন যথাক্রমে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল মোত্তালিব ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম। এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত পৌনে ১২টা) বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেননি। এদিকে নির্বাচনী এলাকা সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় জয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল বের করেন। প্রসঙ্গত, গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বির মৃত্যুতে এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ১২ অক্টোবর এ আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছিল নির্বাচন কমিশন। পরে ৪ জানুয়ারি পুনরায় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

সিইসির সন্তোষ : ১২ অক্টোবর ঢাকায় বসে সিসি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দিলেও এবারের ভোটচিত্রে সন্তোষ জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ইভিএমে ভোট হওয়ার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা থাকায় স্বচ্ছ নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা থাকবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি কমিশন। গতকাল পুনর্ভোট শেষে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সিইসি এসব কথা বলেন। সিইসি বলেন, সেখানে পুলিশ ও প্রশাসন  নিরপেক্ষ ছিল, ভোটও ভালো হয়েছে।ইভিএমে ধীরগতি ছিল না, কোনো অভিযোগও উত্থাপিত হয়নি। ভোটার উপস্থিতি গড়ে ৩৫%-এর কমবেশি হতে পারে। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়। সেই আসনে ১২ অক্টোবর উপনির্বাচনে সম্পূর্ণ ইভিএমে ভোট গ্রহণ হচ্ছিল। তবে সিসি ক্যামেরায় পুরো আসনের এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি। এমন ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম। এরপর গতকাল আসনটিতে আগের প্রার্থীদের নিয়েই পুনর্ভোট হলো। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলে ইভিএমে। ঢাকা থেকে সিসি ক্যামেরায় ভোট মনিটরিং করেন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা। কনকনে শীতের মধ্যে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম হলেও প্রার্থী, ভোটার, নির্বাচন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের ভূমিকার প্রশংসা করেন সিইসি। তিনি বলেন, এবারের ভোটের শুরুতেও পরিবেশ সুন্দর ছিল, সমাপ্তিটাও চমৎকার হয়েছে। সব মিলিয়ে শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খলভাবে সুন্দর ভোট হয়েছে। সেদিক থেকে নির্বাচনটা সফল হয়েছে। ভোটে কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ যেমন পাওয়া যায়নি, তেমনি ভোট দিতে কারও অসুবিধা বা ধীরগতির অভিযোগ আসেনি। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ইলেকটোরাল গভর্ন্যান্স ও সিসি ক্যামেরা একটা নতুন সংযোজন। সিসি অনেক তীক্ষè ও কার্যকর হচ্ছে। ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম হলে সচেতন থাকে সবাই, কেন্দ্রের ভিতরে-বাইরে আগের চেয়ে অনেক বেশি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটে সিসি ক্যামেরা ইতিবাচক। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও আমাদের কর্মকর্তারা পেশাদারি দেখিয়েছেন, নিরপেক্ষভাবে কাজ করে দেখিয়েছেন। এখানে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এটা আমাদের সক্ষমতা, জাতীয় সংসদের নির্বাচনে সমৃদ্ধ করবে। মাঠে প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর আমাদের নজরদারি থাকবে।

কম উপস্থিতির শান্তিপূর্ণ ভোট গাইবান্ধায় : বন্ধ ঘোষিত গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে কেন্দ্রগুলোয় ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। তবে কয়েকটি কেন্দ্রে দুপুরের পর ভোটারের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। ইভিএমের কোনো ত্রুটি বা অসুবিধার অভিযোগ পাওয়া যায়নি ভোটারদের কাছ থেকে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতায় সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোয় ভোটারের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। সকালের দিকে কোনো কোনো কেন্দ্র ছিল ভোটারশূন্য। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন। নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। ভোট শুরুর পরপরই সাঘাটা উপজেলার ফলিয়া দিগর দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন। আর বোনারপাড়া কাজী আজহার আলী উচ্চবিদ্যালয়ে ভোট দেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মানুষ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দিয়েছে। ফলাফলে নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হবে। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জু বলেন, ‘মথরপাড়া মাদরাসা কেন্দ্রে আমার এজেন্টের কাগজ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, কামালের পাড়া, ঘুড়িদহ, জুমারবাড়ী, সাঘাটাসহ কয়েকটি স্থানে আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। ভোটারদের রাস্তাঘাটে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে যেন লাঙলে ভোট দেওয়া না হয়।’ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ইভিএম নিয়েও কোনো অভিযোগ নেই। প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট এ নির্বাচনে পড়েছে।’

সর্বশেষ খবর