শিরোনাম
রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ছিনিমিনি খেলতে দেব না দেশ নিয়ে : শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

ছিনিমিনি খেলতে দেব না দেশ নিয়ে : শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কাউকে দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ চলবে। এই মাটিতে (টুঙ্গিপাড়া) বসে এ প্রতিজ্ঞা নিচ্ছি যে, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি কেউ যাতে গতিরোধ করতে না পারে, তার জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি নেতা-কর্মী সজাগ থাকবে, দৃঢ় থাকবে। গতকাল বিকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলটির জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দশমবারের মতো দলীয় সভানেত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। পরে দলীয় সভানেত্রী কাউন্সিলরদের দেওয়া ক্ষমতাবলে জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত করেন। দলটির নতুন নেতৃত্ব আসার পর এই প্রথম বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত টুঙ্গিপাড়ায় সভা অনুষ্ঠিত হলো। দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সভায় শোক প্রস্তাব পাস করা হয়।

সভা সঞ্চালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় দলের নবনির্বাচিত কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মিলনায়তনের বাইরে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সভা উপভোগ করেন।

আগামীতে আগে কোটালীপাড়ায় যাবেন বলে নেতা-কর্মীদের জানান শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের নেতাদের টুঙ্গিপাড়া সফরের অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনাদের সবার দাওয়াত থাকল, যে কোনো সময় টুঙ্গিপাড়ায় আসতে পারেন। আমাদের আতিথেয়তা নিতে পারেন। আমাদের দেশের লোক আপনাদের সাদরে গ্রহণ করবে। এ সময় তিনি দলীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয়তলায় গিয়ে টুঙ্গিপাড়ার পিঠা খাওয়ার জন্য বলেন। শীতের তীব্রতার কারণে সভা মুলতবি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী শুক্রবার বা শনিবার সভাটি পুনরায় করার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের যে কোনো দিন সভা হবে। সেখানে সবাই উপস্থিত থাকবেন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। তাদের ঘৃণা জানাতে হবে। তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। হত্যা, খুন ও গুম জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। খালেদা জিয়া ও তার কুলাঙ্গার পুত্র মিলে ২১ আগস্ট থেকে শুরু করে মানুষ হত্যা করেছে এবং অত্যাচার নির্যাতন করেছে। আগামীতে যদি একটা মানুষকেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত করে তাহলে যে হাত দিয়ে আগুন দেবে ওই আগুনে সেই হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে। যে হাতে মানুষ খুন করবে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হবে। এই কথাটা যেন সবার মনে থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আন্দোলন করতে চায়, আমরা বাধা দেব না। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি আবারও কোনো রকমের নাশকতা করে, দেশের ক্ষতি সাধন করতে চায়, আর্থ-সামজিক ক্ষতিসাধন করতে চায় তাহলে তাদের উপযুক্ত জবাব জনগণ দেবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। পরে উপনির্বাচনে একটা। এটা বোধ হয় আপনাদের মনে থাকে না। এটাই ছিল তাদের শক্তি। সে জন্য তারা কোনো নির্বাচন চায় না, ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) বলে আওয়ামী লীগ নাকি দেশের সর্বনাশ করেছে। একই দিন ১০০ সেতু এবং ১০০টি সড়ক উন্নত ও উদ্বোধন করা কী সর্বনাশ? এগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরা উচিত। আমরা আছি জনগণের পাশে, আর তারা আছে ধ্বংস করতে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশের মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পাচ্ছে, আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য যা দরকার তা তাঁর সরকার করবে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। বাংলাদেশকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এর জনগোষ্ঠীও হবে স্মার্ট। তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাংলার মানুষের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার আওয়ামী লীগ করবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যে কোনো সংকটে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে আছে এবং থাকবে বলেও জানান তিনি।

যৌথ সভায় সরকারপ্রধান বলেন, গ্রামপর্যায়ে মানুষের উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা সবার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করছি। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও আমরা আমাদের দেশের মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সে পদক্ষেপ নিয়েছি। কোনো জমি অনাবাদি থাকবে না। সে জন্য সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী যেন আমরা নিজেরাই সবকিছু উৎপাদন করতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় আছে, মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য যা যা করণীয় সেটা করে যাবে।

যৌথ সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করেন। করোনার কারণে গত দুই বছর জাতীয় শিশু দিবস জাঁকজমকভাবে করা হয়নি বলেন জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এবারেই আমরা দিবসটি ভালোভাবে পালন করব। এর আগে সকালে দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে তিনি জাতির জনকের কবর জিয়ারত করেন। তাঁরা সেখানে ফাতেহা পাঠ করেন এবং জাতির পিতা ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার অন্য শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ১টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এসব প্রকল্পের মধ্যে ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। বাকি ৯টি প্রকল্প শিক্ষা ও গণপূর্ত বিভাগ এবং টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা বাস্তবায়ন করেছে। গত শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পর সড়কপথে খুলনায় গিয়ে মায়ের নামে কেনা সম্পত্তি ঘুরে দেখেন তিনি। খুলনা থেকে আবার সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ফিরে নিজ বাসভবনে রাতযাপন করেন শেখ হাসিনা। এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টার থেকে ৭টি বাসে করে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেন দলের নবনির্বাচিত কমিটি। ১২টার দিকে সেখানে পৌঁছে জাতির জনকের কবর জিয়ারত, দোয়া এবং যৌথ সভা শেষে সাড়ে ৩টার দিকে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সড়কপথে ঢাকায় ফেরেন।

১৫ রকম পিঠা দিয়ে নেতাদের আপ্যায়ন : বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বরাবরই অতিথিপরায়ণ। এবারও ব্যতিক্রম করেননি। দলীয় নেতা-কর্মীরা যখনই টুঙ্গিপাড়ায় যান সেখানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকলে নিজ হাতে অতিথিদের আপ্যায়ন করে থাকেন। এর আগেও এমন নজির রয়েছে। গতকালও ব্যতিক্রম করেননি। জাতীয় পরিষদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের জন্য কমপক্ষে ১৫ পদের পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পরিষদের সদস্য ও সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম হোসেন আলী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বরাবরই অতিথিপরায়ণ। গণভবনে গেলে যেমন না খেয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের বের হতে দেন না, তেমনি তাঁর পিতৃভূমি টুঙ্গিপাড়াতেও আপ্যায়ন করে থাকেন। গতকালও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, চিতই পিঠা, পাকন পিঠা, নানা রকমের ফুল পিঠাসহ প্রায় ১৫ পদের পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন তিনি।

পৈতৃক জমি পরিদর্শন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের পুবের বিলে নিজেদের পৈতৃক জমি পরিদর্শন করেন। জলাভূমির অন্তর্গত এ অঞ্চলের জমিগুলো বছরের ৮-৯ মাসই পানির নিচে থাকে। সবজি ও অন্যান্য ফসল চাষ করে এ জমিগুলো চাষ উপযোগী করে তোলার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুকন্যা নির্দেশনা দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের সব? অনাবাদি পতিত জমিতে চাষাবাদ করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানান। কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে।

সর্বশেষ খবর