মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শোডাউনে বিএনপি, মাঠে আওয়ামী লীগ

♦ আগামীকাল সারা দেশে বিএনপির গণ-অবস্থান ♦ যুগপৎভাবে পালন করবে সমমনা দলগুলো ♦ আসছে নতুন কর্মসূচি ♦ রাজধানীতে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ, থাকবে সতর্ক পাহারায়

শফিউল আলম দোলন, রফিকুল ইসলাম রনি ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে সমমনা দলগুলো নিয়ে আগামীকাল গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এ কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের এই কর্মসূচি থেকেই ঘোষণা করা হবে তৃতীয় ধাপের নতুন যুগপৎ কর্মসূচি। বড় আকারের মানববন্ধন, মানবপ্রাচীর কিংবা লংমার্চের মতো কিছুটা সহজ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি নিয়েও সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হয়েছে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যা পরবর্তীতে ধাপে ধাপে দেওয়া হবে। এতে নেতৃত্বে থাকবেন সদ্য কারামুক্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উপস্থিত থাকবেন স্থায়ী কমিটির কারামুক্ত সদস্য মির্জা আব্বাসও। কারান্তরীণ থাকার কারণে এর আগে ১০ ও ৩০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে তারা অংশ নিতে পারেননি। সমমনা দলগুলোর সঙ্গে এটি হচ্ছে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি। বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা গণ-অবস্থান করবেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

অন্যদিকে বিএনপির এই কর্মসূচি পালনকালে রাজধানীতে সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ। ঢাকায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং মিরপুর সনি সিনেমা হলের পেছনে ঈদগাহ মাঠে সারা দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীন দল। দুটি স্থানেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করবেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। পিছু হটার কোনো অবকাশ নেই। সরকারের পদত্যাগ আর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দাবি না মানলে ক্রমান্বয়ে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

জানা গেছে, কাল বুধবারের গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে ব্যাপক লোকসমাগমের আশা করছে দলটি। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ১০টি টিম গঠিত হয়েছে। কোন নেতা কোন বিভাগে থাকবেন, তাদের তালিকাও প্রকাশ করেছে দলটি। ‘অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবি’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে বিরোধী দলগুলো। যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে গত ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা ও রংপুর বিভাগে এবং ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে শান্তিপূর্ণ প্রথম গণমিছিল করেছে বিএনপি।

চাল, ডাল, তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি ও কর্মসূচিতে গুলি চালিয়ে হত্যার প্রতিবাদে গত ১২ অক্টোবর থেকে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে গণসমাবেশ করে বিএনপি। সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি হিসেবে ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ ১০টি বিভাগীয় শহরে ৪ ঘণ্টার গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এই কর্মসূচি সফল করতে জেলা পর্যায়ে সফর করছেন দলের সিনিয়র নেতারা। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবিসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনগণের পক্ষে ১০ দফা ঘোষণা করেছি। যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিলে অনেকগুলো সমমনা দল ও জোট সমর্থন জানিয়ে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেছে। ক্ষমতাসীন সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা, লুটপাট, নির্যাতনসহ বহুবিধ অন্যায় দেশের মানুষ কখনো ভালোভাবে নেয়নি। এখন তারা জেগে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের এই কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। তবে ঢল নামবে মানুষের। সাধারণ মানুষ যুক্ত হচ্ছেন আমাদের কর্মসূচিতে। কাজেই বিএনপির আন্দোলন এক দিন সফল হবেই।

রাজধানীতে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ : আগামীকাল বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে রাজধানীতে সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এবং মিরপুর সনি সিনেমা হলের পেছনে ঈদগাহ মাঠে সারা দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। দুই অনুষ্ঠানেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করবেন। এই দুই স্থানে অবস্থান করার পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও সতর্ক পাহারায় থাকবেন। একই সঙ্গে দলীয় এমপি-দলের কাউন্সিলরদের বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যাতে অবস্থান কর্মসূচির নামে নৈরাজ্য করতে না পারে সে জন্য সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির কর্মসূচি মানেই আগুনসন্ত্রাস, সরকারি সম্পদ ধ্বংস, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা। তারা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি। এর আগেও বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জামায়াত রাজপথে নেমে বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। সে কারণে আগামীকালও তারা সন্ত্রাস- নৈরাজ্য করতে পারে। সে জন্যই আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। যেখানে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সেখানেই প্রতিরোধ-প্রতিহত করা হবে। কারণ, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে যা যা করা দরকার আমরা তাই করব।

দলীয় সূত্র জানায়, আগামীকাল সকাল থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সতর্ক অবস্থান করবেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলীয় এমপি ও কাউন্সিলররা পৃথকভাবে সতর্ক অবস্থান করবেন রাজপথে।

দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা বলেন, যুগপৎ কর্মসূচি মূলত বিরোধীদের সরকার পতনের আন্দোলন। এই আন্দোলন কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া যাবে না। এখন থেকে ঢাকার বাইরেও বিরোধীদের কর্মসূচিকালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবেন। গত বছরের ১০ ডিসেম্বরসহ বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজপথে অবস্থান নিয়ে ‘সফল’ হয়েছেন। বিএনপির গণসমাবেশে বড় ধরনের সাড়া ফেলতে পারেনি। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে বিএনপিসহ বিরোধীদের পরবর্তী কর্মসূচির দিনগুলোতেও তাদের ‘চাপে’ রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা রাজপথে থাকবেন বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।

জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের দিন যেভাবে রাজপথে আওয়ামী লীগের আধিপত্য ছিল, একই পরিস্থিতি সামনেও করা হবে। দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কে কোথায় থাকবেন, তা আগেই ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিল মাঠে থেকে বিএনপিকে ‘মোকাবিলা’ করা। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বোঝানো হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ শক্তভাবেই মাঠে আছে। কোনোভাবেই রাজপথ দখলের সুযোগ পাবে না বিএনপি। আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ বলেন, বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ব্যর্থ হয়ে এখন গণ-অবস্থানের নামে আবারও সরকার পতনের নতুন ছক কষছে। এ অবস্থায় বিএনপির কর্মসূচিকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরাও থানা-ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সকাল থেকেই নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থান করতে বলা হয়েছে। একই বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা বর্ধিত সভা করে নেতা-কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছি। সকাল থেকেই ওয়ার্ড-ইউনিট থেকে মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে আসবেন।

সর্বশেষ খবর