মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হত্যা

বাইডেনের উপদেষ্টার বৈঠকের আগে মানববন্ধন মন্ত্রণালয়ের সামনে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাইডেনের উপদেষ্টার বৈঠকের আগে মানববন্ধন মন্ত্রণালয়ের সামনে

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে গতকাল মানববন্ধন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

যুক্তরাষ্ট্রের কেমব্রিজের বাসিন্দা এবং ম্যাসাচুসেটস বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাঈদ ফয়সাল ‘হত্যার’ বিচারের দাবিতে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের আগমুহূর্তে এই মানববন্ধন হয় ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’ ব্যানারে। কেমব্রিজের একজন পুলিশ অফিসার গত বুধবার ফয়সালকে গুলি করে হত্যা করেন। নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা সংকট ও অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চার দিনের সফরে ঢাকা এসেছেন লাউবাচার। মানববন্ধনে সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, যেসব দেশে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলোকে আমরা সেসব জায়গায় প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘন চাই না। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলে। আমরা বলব নিজ দেশে কী ঘটছে, তার ওপর নজর দিন। ওয়াশিংটন পোস্টের খবর বলছে, সেখানে এক বছরে পুলিশের এক হাজার লোককে হত্যা করেছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বলব, এই যে এক হাজার লোককে হত্যা করার ঘটনা, তাতে চোখ বন্ধ করে থাকবেন না। এ দেশে আপনারা যা ইচ্ছা তা করতে পারেন না। অন্য দেশের বিষয়ে নাক গলানোর প্রয়োজন আপনাদের নেই। আপনারা নিজের নাগরিকদের মানবাধিকারের বিষয়ে সোচ্চার হোন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বের দেশগুলো দেখে, এ জন্য আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে প্রতিবাদ করেছি। আমরা সাধারণ জনগণ। আমরা প্রতিবাদ করছি এ কারণে যে আমার এক বাঙালি ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। কথায় কথায় যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু আমাদের বাঙালি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে। এটা আমরা পৃথিবীকে জানাতে চাই। আমাদের দেশে কিছু হলে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা প্রতিবাদ করে। এখন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও প্রতিবাদ করুক। আমরা এটা করেছি, বিশ্বের প্রতিটি জায়গায় যেন এটা ছড়িয়ে পড়ে।

অপর কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন বলেন, আমরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এ হত্যার ব্যাখ্যা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আইনজীবী ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভুষণ বড়ুয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে মানবাধিকার নিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসা না করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

শ খানেক মানুষের এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার প্লাকার্ডে লেখা ছিল ‘যুক্তরাষ্ট্রে আজ মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত’, ‘জাস্টিস ফর ফয়সাল’, ‘ইউএসএতে বাংলাদেশি নিহত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুপ কেন?’, ‘স্টপ কন্টিনিউয়াস হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন’ প্রভৃতি। মানববন্ধন শেষ হওয়ার কিছু সময় পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি এর কিছু জানি না। তবে, এ ধরনের বিষয় উৎসাহব্যঞ্জক না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনার তদন্ত ও বিচার হয়ে থাকে। তাদের ওখানে আইনের শাসন আছে। আমরা বিশ্বাস করি তদন্তের পর এ ঘটনারও বিচার হবে। পরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, মানববন্ধন যারা করেছেন, তারা আমাদেরকে একটা চিঠি দিয়ে জানাতে পারতেন। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আরিফের মৃত্যুর বিষয়টি মার্কিন প্রশাসনের কাছে ইতোমধ্যে তুলে ধরেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে যে এখানে ন্যায়বিচার হবে এবং যে পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে বাংলাদেশি ছাত্র নিহত হয়েছেন, তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বা ডিউটি থেকে সরানো হয়েছে। এমন তথ্য আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। আমরা আশা করি, তারা যেভাবে আশা করেন, সেখানে বাংলাদেশি নাগরিকও সুবিচার পাবেন।

 

সর্বশেষ খবর